কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দুধের বাজারে ধস
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ৮, ২০২০ , ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
দিনের শেষে প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাবে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর দুগ্ধ খামারিরা সংকটে পড়েছেন। ক্রেতার অভাবে দুধ বিক্রি হচ্ছে পানির দামে। দুগ্ধ সংগ্রহকারী বেসরকারি বিভিন্ন ডেইরি ফার্ম, মিষ্টি ও চায়ের দোকান বন্ধ থাকায় দুধের চাহিদা একেবারে তলানিতে এসে পৌঁছেছে। খামারিরা এখন কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন মোড় ও বন্ধ বিপনী বিতানের পাশে খুচরা দরে দুধ বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার কুমারখালী উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে ৪৫৮টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। খামারগুলোতে আনুমানিক ৩০/৩২ হাজার গাভী রয়েছে। শিলাইদহ, নন্দলালপুর, কয়া, বাগুলাট, বাঁশগ্রামসহ হচ্ছে দুগ্ধ উৎপাদনকারী এলাকা। এছাড়া উপজেলার অন্যান্য এলাকায়ও রয়েছে দুগ্ধ খামার। করোনার আগে গড়ে প্রতিদিন খামারগুলো থেকে ৩০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হতো কিন্তু সুষম গো-খাদ্য সংকটে এখন উৎপাদন কমে ২৫ হাজার লিটারে ঠেকেছে। উৎপাদিত দুধের বড় ক্রেতা হচ্ছে কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর বিভিন্ন মিষ্টি ও চায়ের দোকানী। করোনা প্রভাবের আগে মিষ্টি ও চায়ের দোকানদাররা প্রতিদিন গড়ে ১০/১২ হাজার লিটার খামারীদের কাছ থেকে কিনতেন। এছাড়া বেসরকারী বিভিন্ন ডেইরী ফার্মের প্রতিনিধিরাও এখান থেকে দুধ কিনতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মিষ্টান্ন তৈরীতে দুধ থেকে উৎপাদিত ছানা কুষ্টিয়াসহ অন্যান্য জায়গায় সরবরাহ করা হতো। কিন্তু এখন দুধ ও ছানার সেই কদর আর নেই। ক্রেতা সংকটে দুধের বাজারে নেমেছ ধ্বস। খামারীরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে শহরের ওলি-গলি ও রাস্তার পাশে পানির দামে বিক্রি করছে দুধ। আগে খামার থেকেই প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হতো প্রতি লিটার ৫০ টাকা দরে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ২৫ টাকা দরে। এছাড়া কুষ্টিয়া শহরের প্রধান সড়কের পাশে অস্থায়ী দুধ বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০/৪৫ টাকা দরে। এদিকে দুধের বাজারে ধ্বস নামলেও থেমে নেই খামারিদের খরচ। একদিকে দুধের বাজারে ধ্বস অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খামার টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন দুগ্ধ খামারিরা। দুধের বড় খামার ছাড়াও এ এলাকায় ঘরে ঘরে রয়েছে দুগ্ধজাত গরু। ফলে বড় খামাদের পাশাপাশি ছোট ছোট খামারও গড়ে উঠেছে। এদিকে এখানে সরকারী কোন দুধ সংরক্ষণাগার নেই। তবে দুধ শীতলীকরণে বেসরকারী তিনটি আলট্রা সিলিং সেন্টার রয়েছে বলে উপজেলা প্রানিণসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুর-এ- আলম সিদ্দিকী জানান। সরকারী ব্যবস্থাপনায় দুধ সংরক্ষানারগার না থাকায় এ উপজেলার ছোট-বড় সব দুগ্ধ খামারীই ক্ষতির মুখে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এসব দুগ্ধ খামারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখনো কোন প্রনোদনা দেয়া হয়নি। কুমারখালী উপজেলা দয়রামপুর এলাকার খামারী সেলিম শেখ জানান, এখন দুধের কোন ক্রেতা নেই। মৌসুমী কিছু ব্যবসায়ী খামার থেকে দুধ কিনে শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ও বন্ধ বিপনী বিতান সংলগ্ন প্রধান সড়কের ধারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে দুধ বিক্রি করছে। দুধের দর একেবারে তলানিতে পৌঁছালেও ক্রেতা নেই বলে তিনি জানান। কুষ্টিয়া জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার সিদ্দিকুর রহমান জানান, সরকার প্রনোদনা হিসাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষনা করেছে। ইতিমধ্যে জেলার ক্ষতিগ্রস্থ ২৫ হাজার গাভী খামারীর তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থরা ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে বলে তিনি জানান।