কেন এত দামে ব্রাজিলের ‘নতুন রোনালদোকে’ কিনলো বার্সা?
পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৩, ২০২৩ , ১:৪২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: স্পোর্টস
দিনের শেষে ডেস্ক : ইউরোপ কাঁপাতে আসছেন আরো একটি লাতিন প্রতিভা। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী রোনালদোর সঙ্গে এরই মধ্যে যার তুলনা করা হচ্ছে। তার অসাধারণ প্রতিভা দেখে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা এরই মধ্যে ভিতোর রকি। ৩৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে ন্যু ক্যাম্পের দলটির সঙ্গে ৭ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ব্রাজিলের এই উঠতি তারকা। মাত্র ১৮ বছর বয়সী এক ফুটবলারের জন্য প্রায় ৪২০ কোটি টাকা খরচ করতে যাচ্ছে বার্সা। বিষয়টা বিস্ময়েরই সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, বার্সার মত ক্লাব যখন একজন টিনএজ ফুটবলারের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ঈর্ষণীয় মূল্যে তাকে ক্রয় করে আনে, তখন বিষয়টা সবার মধ্যে ভাবনা তৈরি করবেই।
তবে, এর উত্তরও পাওয়া যাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে। ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও’র সঙ্গে এরই মধ্যে তুলনা করা শুরু হয়ে গেছে ভিতর রকির। গোল ডটকমের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, প্রতিবছরই ব্রাজিল থেকে বেশ কিছু প্রতিভা ইউরোপে খেলতে আসে। প্রায় প্রতিটি ফুটবলারই গড়া যেন একটি নির্দিষ্ট মোল্ড দিয়ে।
সাধারণত তারা খুবই স্কিলফুল, দ্রুতগামি এবং সম্ভাবনাময়ী। প্রায় প্রতিটি ফুটবলারই দ্রুত ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তিদের সঙ্গে তুলনীয় হতে থাকেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাদের অনেকেই হারিয়ে যান। নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন না। তবে, অন্য উচ্চতায় পৌঁছতে পারেন এমন ফুটবলারের সংখ্যাও কম নয়। নেইমার, রোনালদিনহো, রোনালদোদের মত ফুটবলার কালে-ভদ্রেই উঠে আসেন।
তবে বার্সেলোনার জালে আটকে পড়া ব্রাজিলিয়ান প্রতিভা ভিতোর রকি হয়তো হারিয়ে যেতে আসছেন না ইউরোপে। কিংবদন্তিদের সঙ্গে যথার্থকারণেই তার তুলনা এসে যাচ্ছে এখনই। তার খেলার স্টাইল, স্কিল, টেকনিক, ট্যাকটিস- সবকিছুই বিখ্যাত আর-নাইনকে (রোনালদো) মনে করিয়ে দিচ্ছে সবাইকে।
রোনালদোর মতোই উত্থান ভিতোর রকির। রোনালদো যে ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন, সেই ক্রুজেইরোর হয়ে টিনেজ বয়সে ক্যারিয়ার শুরু করলেন ভিতোর রকি এবং মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ক্লাবের হয়ে প্রথম গোল করেন তিনি। ঠিক যেন রোনালদোর মতো।
ভিতোর খুবই দ্রুত গতির। বলের ওপর নিয়ন্ত্রন অসাধারণ, ক্রুইফ টার্ন, স্টেপওভার এবং দুর্দান্ত কাটে প্রতিপক্ষকে চমকে দিতে পারেন রকি। এখনও সবকিছু হুবহু রোনালদো ফেনোমেননের মতো নয়। তবে, তার অনেক কিছুতেই রোনালদোর ছাপ রয়েছে। তাই ফেনোমেননের সঙ্গে তুলনা শুরু হতেও সময় লাগেনি। আর এ কারণেই বার্সেলোনার মত ক্লাবও তাকে দলভূক্ত করে নিয়েছে।
ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলের শহর তিমোতেওর এক মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছেন রকি। বাবাও ছিলেন ফুটবলার, তবে অপেশাদার, খেলেছেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে। নিজে ফুটবলার হিসেবে ভালো করতে না পারলেও ছেলের প্রতিভাকে ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন এবং তাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। রকি শুরু থেকেই সহজাত সৃষ্টিশীল ফুটবলার নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ১০ বছর বয়সে আমেরিকা মিনেইরোর হয়ে ফুটবলের হাতেখড়ি তার।
বাবার মতই শুরুতে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। খেলতেন বাবার পজিশনেই। তবে দ্রুতই তার মধ্যে আরও অ্যাটাকিং ফুটবলারের গুনাবলি ফুটে ওঠে এবং তিনি হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর একজন স্ট্রাইকার।
১৪ বছর বয়সেই সবচেয়ে প্রতিভাসম্পন্ন ফুটবলার হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেন; কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তার ক্লাব মিনেইরো। কারণ ভিতোর রকিকে খেলানোর মত তারা কোনো জায়গা খুঁজে পাচ্ছিল না। যে কারণে তার প্রতিভাও বিকশিত হচ্ছিল না। যে কারণে ২০১৯ সালে তিনি পাড়ি জমান ক্রজেইরোতে।
মাত্র দুই মৌসুম বয়সভিত্তিক দলে খেলার পর ২০২১ সালে ক্লাবের হয়ে অভিষেকও হয়ে যায় তার। এখন গোল করতেই বেশি পছন্দ রকির। এর মধ্যে ব্রাজিলের জার্সিতেও ইতিহাস গড়েছেন রকি। মরক্কোর বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার পর রকি এখন এ শতাব্দীতে ব্রাজিলের জার্সিতে অভিষিক্ত সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়। সেই ম্যাচ দিয়ে রোনালদোর পর সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবেও ব্রাজিলের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে তার।
ক্রুজেইরোতে নিজেকে পরিণত করে তুলতে শুরু করেন রকি। এই ক্লাবেই প্রথম পেশাদার চুক্তি করেন তিনি ২০২১ সালের মে মাসে। ৯ মাস পরেই মূল দলের হয়ে প্রথম গোল করেন এই ফুটবলার। এপ্রিল ২০২২ এর মধ্যে ১৬ ম্যাচে ৬ গোল করেন তিনি। রকির প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে গত বছরের এপ্রিলে অ্যাথলেটিকো পারানায়েনসে নিজেদের দলবদলের রেকর্ড ভেঙে ৪.৪ মিলিয়ন ইউরোতে তাকে দলে ভেড়ায়। এই ক্লাবের হয়ে শুরুতে একাদশে জায়গা পেতে কষ্ট হয়েছে তার। কিন্তু মাঠে যখনই নামার সুযোগ পেয়েছেন প্রমাণ করেছেন নিজেকে।
লাতিন আমেরিকা থেকে তার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপেও। যে কারণে নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই লা লিগা ও প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো তাকে পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। বিশেষ করে রোনালদোর সঙ্গে তুলনা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। এ সময় অবশ্য পরিস্থিতি সামলাতে রকি পাশে পেয়েছেন কিংবদন্তি কোচ লুইস ফিলিপ স্কলারিকে।
কারণ, রকিকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের সময়টাতে পারানায়েনসের তখনকার কোচ ছিলেন স্কলারি। তিনি বেশ সতর্কভাবেই বলেছেন, ‘সে আরও ভালো করবে। যদি সে নিজের উন্নতি ধরে রাখতে পারে তবে এমন একজন খেলোয়াড় হবে, যার কাছ থেকে ব্রাজিল অনেক আনন্দ পাবে।’
এরই মধ্যে ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়ে গেছে রকির। এবার ইউরোপেও পাড়ি জমাচ্ছেন বার্সেলোনার মত ক্লাবের হয়ে। এখন দেখার বিষয়, কতটা পত্র-পল্লভে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠতে পারেন ভিতোর রকি।