ক্ষমা চাইলেন ফ্লোরিডায় গুলিবর্ষণকারীর বাবা
পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৩, ২০১৬ , ২:০৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব,সারাবিশ্ব লীড
অনলাইন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডোতে সমকামীদের একটি নৈশক্লাবে গুলি করে ৫০ জনকে হত্যাকারী হিসেবে শনাক্ত ওমর মতিনের বাবা সিদ্দিক মতিন এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
রোববার এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মির সিদ্দিক নামেও পরিচিত সিদ্দিক মতিন দাবি করেছেন, তার ছেলের ঘটানো তাণ্ডবের সঙ্গে ‘ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই’।
তিনি জানান, মায়ামির ডাইনটাউনে ঘটা এক ঘটনায় অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন তার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া ২৯ বছর বয়সী মতিন।
ওই ঘটনায় মতিনের উপস্থিতিতে তার অল্পবয়স্ক ছেলে ও তার স্ত্রীর সামনে দুজন সমকামী পুরুষ পরস্পরকে চুম্বন করেছিল। এতে মতিন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
সাক্ষাৎকারে সিদ্দিক মতিন বলেন, “পুরো ঘটনার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী । সে কিছু করতে যাচ্ছে আমরা তা বুঝতে পারিনি। এ ঘটনায় পুরো দেশের মতো আমরাও হতবাক।”
সিদ্দিক মতিন টেলিভিশন টকশো-র একজন আলোচক।
রাজনৈতিক আলোচক হিসেবে ভিন্নমতাবলম্বী সিদ্দিক পাকিস্তান ও আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির তীব্র বিরোধী।
তিনি যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি আফগান স্যাটেলাইট চ্যানেলে তিন বছর ধরে অনিয়মিত একটি টকশো পরিচালনা করেন। নিজের ফেইসবুক পেইজে ধারাবাহিকভাবে তিনি রাজনৈতিক মন্তব্য পোস্ট করে আসছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক ওই স্যাটেলাইট চ্যানেল পায়াম-ই-আফগান এর স্বত্তাধিকারী ওমর খাত্তাব এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সিদ্দিক মাঝে মাঝে তার চ্যানেলের সময় কিনে ‘ডুরান্ড জিরগা’ নামের একটি টকশো সম্প্রচার করেন।
বছরে ‘তিন থেকে চারবার’ এ অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য সিদ্দিক তার ক্যালির্ফোনিয়ার স্টুডিওতে আসেন বলে জানান খাত্তাব।
খাত্তাব বলেন, “দুই থেকে তিন ঘণ্টা তিনি কথা বলতেন। তিনি তার নিজের জন্য সময় কিনে নিতেন। এখানে আসতেন, অনুষ্ঠান প্রচার করতেন, তারপর একদিনের মধ্যেই চলে যেতেন।”
এই টকশোতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে বিভক্তকারী বিতর্কিত সীমান্ত ‘ডুরান্ড লাইন’কে কেন্দ্রে করে কথাবার্তা বলা হয়। এই লাইনটি ব্রিটিশ শাসিত ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্ত চিহ্নিত করেছিল, যা আজকে পাক-আফগান সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
খাত্তাব জানিয়েছেন, সিদ্দিক মতিনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী মূলত পাকিস্তান-বিরোধী।
সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী সিদ্দিক ফ্লোরিডায় বসবাস করেন। তবে কবে থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসে বসবাস শুরু করেছেন তা জানা যায়নি। তার ফোনে বার্তা পাঠানো হলেও সেটি বন্ধ বলে মনে হয়েছে, ইমেইল পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি তিনি।
সিদ্দিক মতিনের নামে ইউটিউবে একটি চ্যানেল আছে। এতে ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পোস্ট করা একশরও বেশি ভিডিও আছে।
এর মধ্যে একটি ভিডিওতে তিনি পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে ‘খুনি আইএসআই’ বলে মন্তব্য করে একে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের জনক এবং সৃষ্টিকর্তা’ বলে অভিহিত করেছেন।
অন্য একটি ভিডিওতে পশ্চিমা পোশাক পরিহিত সিদ্দিকিকে দারি ভাষায় কথা বলতে দেখা যায়। এতে তিনি অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট গনির গৃহীত পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করেন।
এছাড়া পাকিস্তান, আইএসআই, সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, আফগানিস্তানের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং কয়েকজন জিহাদি নেতাকে তীব্র সমালোচনা করে কথাবার্তা বলেন।
ফেইবুক পেইজে ফেব্রুয়ারিতে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি তালেবান সদস্যদের নিয়ে কথা বলেন এবং তাদের আইএসআই-এর ‘চাকর’ বলে অভিহিত করেন।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যগুলোতে সহিংসতায় মদদ দেওয়ার জন্য আইএসআই এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। কিন্তু সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
ফ্লোরিডার হামলার সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা বিদেশি কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো ধরনের সরাসরি যোগাযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
ওমর মতিনের সঙ্গে এ ধরনের কোনো গোষ্ঠীর গোপন যোগাযোগেরও কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে সতর্ক করেছেন তারা।