খাল উদ্ধারে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ১১, ২০২০ , ১২:৩৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
দখল আর দূষণে হারিয়ে গেছে রাজধানীর অধিকাংশ খাল। অবশিষ্ট খালগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত করুণ। এসব খাল ভরাট করে অবৈধভাবে দোকানপাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। রাজধানীকে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে হলে খালগুলো উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। এক সময় ঢাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূলে ছিল শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা খাল। যেগুলো নগরীর চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। রাজধানীতে ৪৭টি খাল ছিল। এখন ২১টি খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। টিকে থাকা ২৬টি খালও অনেকটা প্রাণহীন। গত ৮ বছরে ঢাকার ১১টি খাল নর্দমা আর ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আবর্জনায় জমাটবাঁধা খালের নর্দমায় খুঁটি পুঁতে পাটাতন বসিয়ে তার ওপর একের পর এক বস্তি তোলা হয়েছে। স্থায়ীভাবে আটকে গেছে পানিপ্রবাহের পথ। ৩০-৩২ বছর আগেও ঢাকার প্রান্তঃসীমায় স্রোতবাহী যেসব খালে পণ্যবাহী বড় বড় নৌকার আনাগোনা ছিল, সে খালগুলো এখন দুই-আড়াই ফুট চওড়া নর্দমার আকার ধারণ করেছে। দখলবাজদের আগ্রাসী থাবায় খালগুলোর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা ওয়াসার কাছে খালগুলোর কোনো নথি নেই। সায়েদাবাদ থেকে দয়াগঞ্জ, রাসেল স্কয়ার থেকে গ্রিন রোড চৌরাস্তা, মহাখালী থেকে নিকেতন বক্স কালভার্ট, ইব্রাহীমপুর বক্স কালভার্ট- প্রায় ১০ কিলোমিটার খাল ভরাট করে বক্স কালভার্ট করা হয়েছে। এ কারণে বর্ষায় পানি নিষ্কাশনে এসব খাল কার্যকর কোনো ভ‚মিকা রাখতে পারছে না। এছাড়া বিদ্যমান ২৬টি খালের মধ্যে পাঁচটি খাল (হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ী) ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড হয়ে রয়েছে। ওয়াসার একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেই প্রভাবশালী মহল বছরের পর বছর ধরে খাল দখলের মচ্ছব চালিয়ে আসছে। বাঁধ দেয়া, বস্তি স্থাপন এবং খালের জায়গা প্লট আকারে বিক্রির ধান্দাবাজি প্রক্রিয়ায় ঢাকার খালগুলো সব নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। পানিপ্রবাহের পথগুলোর অস্তিত্ব না থাকায় কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতেই রাজধানীজুড়ে নজিরবিহীন নাগরিক বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটে। নগরীকে বাঁচাতে সরকারের পদক্ষেপও কম নয়। প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও খাল উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হলেও এর অগ্রগতি হতাশাজনক। এর আওতায় ১৬টি খাল উন্নয়নের কাজ চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ২০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন হয়নি। করোনার কারণে এখন সম্প্রসারণ কাজ বন্ধ রয়েছে। মূলত ৭টি সংস্থার অধীনে থাকা এসব খালের একক কোনো অভিভাবক নেই। ওয়াসা নামমাত্র দেখভাল করে থাকে। সিটি করপোরেশন আইন (২০০৯) অনুযায়ী জনবলসহ খালের মালিকানা চান তারা। ওয়াসাও দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ঝুলে আছে। সরকারের উচিত প্রতিটি খালের অবস্থান চিহ্নিত করে সেগুলোকে উদ্ধারের লক্ষ্যে জরুরিভিত্তিতে তৎপর হয়ে ওঠা। পাশাপাশি খাল উন্নয়নে যে প্রকল্প চলমান তা দ্রæত শেষ করতে মনিটরিং জোরদার করা।