আজকের দিন তারিখ ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ ঘোড়ায় চড়ে ‘ভিক্ষা’ করেন বোরহানউদ্দিনের জালু মিয়া

ঘোড়ায় চড়ে ‘ভিক্ষা’ করেন বোরহানউদ্দিনের জালু মিয়া


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১৫, ২০২৩ , ৫:৩৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ


বোরহানউদ্দিন (ভোলা) সংবাদদাতা : বাংলায় প্রবচন আছে ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ হাঁটিয়া চলিল’। ঠিক সেই রকম না হলেও- ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ ভিক্ষায় চলিল’ এ কথারই বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে ভোলার বোরহানউদ্দিনের চরগঙ্গাপুর গ্রামের জালু মিয়া (৫৫)। ভিক্ষুক জালু মিয়া প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভিক্ষা করেন ৷ বয়সের ভারে হাঁটতে পারেন না বলে তাকে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে হয়। ৪ বছর আগে ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ঘোড়াটি কিনেন তিনি। সেই ঘোড়ায় চড়েই মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি। প্রতিদিন ভিক্ষা করে তার আয় হয় ৩শ থেকে ৪শ টাকার মতো। এতে ঘোড়ার খাবার কেনার পর কোনো রকম চলছে তার মানবেতর সংসার জীবন।
সে সাচড়া ইউনিয়নের দরুন গ্রামের মৃত আব্দুল মতলবের ছেলে। তার ৪ ভাই ও ১ বোন। এক সময় সে ওই গ্রামের পৌত্রিক বাড়িতে থাকতো। কিন্তু কোনো জায়গা জমি না থাকায় একই ইউনিয়নের পাশের চর গঙ্গাপুর গ্রামে বোনের বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে এসে অন্যের জমিতে পলিথিন আর নারিকেল পাতা দিয়ে তৈরি করেন ঝুপড়ি ঘর। বৃষ্টি হলে সারা ঘর দিয়ে পানি পড়ে। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেখানেই থাকেন জালু ফকির।
জালু মিয়া জানান, অনেক আগে বিয়ে করি। ওই ঘরে একটা ছেলে ছিল। কিছু দিন পর তার মা মারা যায়। এর কয়েকদিন পর সেই ছেলেটিও মারা যায়। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করি। সেই ঘরে কোনো সন্তান নাই। তাই আমি আর স্ত্রী ভিক্ষা করে খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছি। আমার কোনো জায়গা জমি নেই। পরিবারেও সচ্ছল কেউ নাই। তাই পাশের গ্রামে এসে অন্যের জমিতে পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে থাকি। বৃষ্টি আসলে ঘর দিয়ে পানি পড়ে। অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছি। ঘোড়াটাই আমার সম্বল। ঘোড়াটা আছে বলেই ঘরে চুলা জ্বলে।’ তিনি আরও জানান, আগে মানুষের কাজ করে খেতাম। এই বয়সে এখন কেউ কাজ দেয় না। তাছাড়া কাজ করার ক্ষমতাও তার শরীরে নেই। কোনো সহায় সম্বলও নেই। তাই বাধ্য হয়েই এ পেশাতে আসতে হয়েছে আমার। শেষ বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে থাকার জন্য তাকে যেন একটি সরকারি ঘর দেওয়া হয় এমন দাবি করছেন তিনি। তার প্রতিবেশী কালাম, আমির ও শাহানুর বেগম জানান, তাদের কোনো জায়গা জমি ও সন্তান নাই। সে তার স্ত্রীকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় এখানে বাস করছে। তাই ভিক্ষা করেই ক্ষেতে হয় তাদের। তারা যে ঘরে বসবাস করেন সেটা কোনো মানুষের বসবাস করার মতো না। সাচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুল্লাহ মৃধা জানান, সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারি তাকে সহযোগিতা করি। সে যাতে একটি সরকারি ঘর পায় তার ব্যবস্থা করা হবে।