আজকের দিন তারিখ ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// চিকিৎসক-নার্সদের দেখা মেলে না, মেলে না অক্সিজেন

চিকিৎসক-নার্সদের দেখা মেলে না, মেলে না অক্সিজেন


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৮, ২০২০ , ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে প্রতিবেদক : দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে কোভিড -১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সরকার এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিলেও হাসপাতালগুলোতে জনবলের ঘাটতি, অক্সিজেনের ঘাটতিসহ নানা অভাবের সঙ্গে এবারে যোগ হয়েছে অব্যবস্থাপনা। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগী ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সদের দেখা মেলে না, মেলে না বেডের চাদর-বালিশ, মেলে না অক্সিজেন। অব্যবস্থাপনার কারণে রোগী হাসপাতাল থেকে চলে এসেছেন নিজ দায়িত্বে। রোগীর স্বজনরা বলছেন, এই হাসপাতালে যাওয়ার পর প্রতিটি পদক্ষেপে মনে হয়েছে- করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ অপরাধ করেছে।কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হন মিরপুরের উত্তর টোলারবাগের বাসিন্দা শাখাওয়াত হোসেন স্বপন। কিন্তু হাসপাতালের অব্যবস্থাপার কারণে দশ দিনের মাথায় ১৭ এপ্রিল নিজ দায়িত্বে ডিসচার্জ নিয়ে চলে আসেন তিনি। ফোনে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে থাকার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে শাখাওয়াত হোসেন বলেন, খুব অসহায় লাগছিল, ডাক্তার-নার্স কেউ ছিল না, হাসপাতালের যা অবস্থা তাতে নিরাপদ বোধ করছিলাম না। হাসপাতালের অবস্থার কথা জানিয়ে শাখাওয়াত হোসেন জানান, সেখানে সকালে একবার এসে তিন বেলার ওষুধ দিয়ে যাওয়া হতো, সারাদিনেও কোনও চিকিৎসক, নার্স বা অন্য কেউ আসতেন না। তার ভাষায়, ‘আমি ১০ দিন ছিলাম, কেবল শেষ দিনে একজন চিকিৎসক ছাড়া আরও কারও চেহারা দেখিনি।’ এমনকি হাসপাতালে করা পরীক্ষার রিপোর্ট ১০ দিনেও পাননি বলে জানান তিনি তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে সিনিয়র কাউকে কখনোই দেখিনি, সব কম বয়সী চিকিৎসক, তাদের তো এমনিতেই আকঙ্ক থাকবে, আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না, কিন্তু হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট ভালো হওয়া দরকার ছিল, যেহেতু এই হাসপাতালকে কোভিড-এর জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে। তবে হাসপাতালে তিন বেলা খাবারের মান ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু সেবাটা পাইনি, ক্লিনারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন,আমি যে বেডে উঠেছিলাম, তার ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগে সে বেডের রোগী মারা যান। কিন্তু কিছুই পরিষ্কার করা হয়নি, জুতো-জামাকাপড় সব পড়েছিল। তিন দিন ধরে অনেক খুঁজে চতুর্থ দিনের দিন একজন নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে দিয়ে রুমটা পরিষ্কা করাতে পেরেছিলাম। আমি যে ১০ দিন ছিলাম এই ১০ দিনে কেউ আসেনি, কেউ এসে জ্বর দেখেনি, প্রেসার দেখেনি, ওষুধ ঠিকমতো খাওয়া হচ্ছে কিনা, কেউ দেখেনি। ভর্তি হওয়ার পর বেডে উঠেছি, নিজের মতো করে ওষুধ খেয়েছি, সময়গুলো পার করে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এসেছি। গত ১৮ এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় করোনা আক্রান্ত ৫৮ বছরের বিকাশ সাহাকে, সেদিন ভোরেই মারা যান তিনি। অক্সিজেনের অভাব, হাসপাতালে কোনও সাহায্য না পাওয়া, অব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ তার পরিবারের। বিকাশ সাহার ছেলে অনির্বান সাহা জানান, ১৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে রওনা হয়ে তারা যখন কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌঁছান তখন দুপুর পৌনে দুইটা। কিন্তু শুরুতেই সেখানে বিপত্তি বাধে করোনা পজিটিভ হওয়ার কনফার্মেশন নিয়ে। কারণ, নারায়ণগঞ্জ থেকে অর্নিবানকে ফোনে জানানো হলেও তাদের কাছে লিখিত কোনও ডকুমেন্টস ছিল না, এসব হয়রানি পেরিয়ে অনেক যোগাযোগ করার পর তার বাবাকে (বিকাশ সাহাকে) ভর্তি নেওয়া হয়। কিন্তু তারপরই শুরু হতে থাকে প্রকৃত অব্যবস্থাপনার চিত্র। বিকাশ সাহাকে পাঁচ তলাতে যে রুমে থাকতে দেওয়া হয়, সেখানে থাকা বেডে না ছিল চাদর, না ছিল বালিশ। অনির্বান আরও জানান, চাদরের বদলে তার স্ত্রীর নিয়ে যাওয়া শাড়ি বিছিয়ে তার বাবাকে শোয়ানো হয়। বালিশ এবং মশারি চাওয়ার কারণে তার স্ত্রীকে বলা হয়- ‘আপনার কতকিছু প্রয়োজন, বারবার কেন আসছেন’। শ্বাসকষ্ট বেশি হওয়াতে বিকাশ সাহাকে অক্সিজেন দেওয়া হয় রাত ১২টার আগে, কিন্তু এরপর আবার শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পর রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়নি। এরপর অক্সিজেন দেওয়া হলেও তাতে কোনও কাজ হচ্ছিলো না বলে অভিযোগ অনির্বানের। তিনি বলেন, ‘পুরোটা রাত বাবা অক্সিজেনের অভাবে কষ্ট পেয়েছে, ছিল না কোনও চিকিৎসকও।’ অনির্বান জানান, সারারাত বাইরে থাকার পর ভোরে তিনি বাবাকে দেখতে যান এবং গিয়ে দেখেন তার অবস্থা গুরুতর। পাঁচ তলায় চিকিৎসক-নার্সদের খোঁজে নিরাপত্তারকক্ষীদের অনুরোধ করেও কোনও লাভ হয়নি। পরে একজন নার্স আসেন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে, ততক্ষণে বাবা মারা গেছেন। অনির্বান আরও বলেন, ‘সেই নার্স যে ব্যবহার করেছে, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। আর কুর্মিটোলাতে গিয়ে একটা কথা আমার মনে হয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগী বা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে যাচ্ছে তাই ব্যবহার, খুব খারাপ ব্যবহার, এতটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য ব্যবহার করে যে- কারও করোনা হলে তার মনে হবে এটা কোনও অপরাধ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া একজন চিকিৎসক বলেন, ‘রোগী যখন ভর্তি হচ্ছে. তখন ওয়ার্ড বয়, নার্স, ক্লিনাররাও খারাপ ব্যবহার করে। চিকিৎসক জানার পর ব্যবহার ভালো হয় ঠিকই কিন্তু সেটা তো আসল রূপ নয়, সাধারণ মানুষের সঙ্গে তারা এমন ব্যবহার করতে পারে না, ভয়াবহ খারাপ ব্যবহার, অব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত। আরেক হাসপাতালের একজন নার্স করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন এই হাসপাতালে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নার্স জানান, রোগীদের জন্য খাওয়ার পানি নেই প্রতি ফ্লোরে। তাকে পানি আনতে হয় অন্য ফ্লোরে গিয়ে। রোগীকে নিজে পানি আনতে হয়, হ্যান্ডওয়াশ নেই, ওয়াশরুম নোংরা, আসে না পরিচ্ছন্নকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে অনেক অব্যবস্থাপনা, তবে সামনে আরও খারাপ অবস্থা হবে। এসই হচ্ছে আগে থেকে প্রস্তুতি না নিয়ে সব ঠিক বলার ফলাফল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভালো মানের পিপিই আর মাস্কের সাপ্লাই শেষ হলেই শুরু হবে সার্কাসের পরবর্তী ধাপ।’ এসব বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদকে গত দুই দিন ধরে মোবাইল ফোনে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।