চীনা টিকায় ভরসা করে বিপাকে কয়েকটি দেশ
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২৪, ২০২১ , ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে ডেস্ক : চীনের তৈরি সহজলভ্য করোনা টিকার ওপর ভরসা করে বিপাকে পড়েছে মঙ্গোলিয়া, বাহরাইন, চিলি ও পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপদেশ সেশেলস। এসব দেশে করোনা মুক্ত হওয়া তো দূরের কথা, এখন করোনার প্রকোপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দেশগুলোতে করোনা ঊর্ধ্বগতিতে চীনা টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের চীন গত বছর করোনার ভয়াবহতা থেকে সুরক্ষায় একটি নিরাপদ এবং কার্যকর টিকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের টিকা কূটনীতির প্রচার শুরু করেছিল। যদিও সেই সময় তাদের এই টিকা ভাইরাস সংক্রমণ কমাতে কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় ছিল। এখন কয়েকটি দেশের পরিস্থিতির বিচারে দেখা যাচ্ছে, চীনের টিকা ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে খুব কার্যকর নাও হতে পারে, বিশেষ করে করোনার নতুন ধরনগুলোর ক্ষেত্রে।
‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’র তথ্যানুযায়ী, সেশেলস, চিলি, বাহরাইন এবং মঙ্গোলিয়ার জনসংখ্যার ৫০% থেকে ৬৮% মানুষকেই পুরোপুরি টিকা দেওয়া হয়ে গেছে, টিকাকরণের এই হার ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রকেও। কিন্তু ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এর তথ্যানুযায়ী, সম্প্রতি গত সপ্তাহে এই ৪ দেশই বিশ্বে করোনা বিপর্যস্ত শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। আর এই দেশগুলো সবই মূলত ব্যবহার করেছে চীনের সিনোফার্ম এবং সিনোভ্যাক বায়োটেক কোম্পানির তৈরি কোভিড টিকা। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জিন দোগান বলেন, টিকাগুলো যথেষ্ট ভাল হলে আমাদের এই ধরনের পরিস্থিতি দেখতে পাওয়ার কথা ছিল না। এর প্রতিকার করার দায়িত্ব চীনের ওপরই বর্তায়।
কিছু দেশে টিকা দেওয়ার হার বেশি হওয়ার পরও সেখানে নতুন করে করোনার বিস্তার ঘটার কারণ কি সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানেন না। হয়তো করোনার নতুন ধরন, সামাজিক দূরত্ব বিধি শিথিল থাকা কিংবা এক ডোজ টিকা নেওয়া মানুষজনের খামখেয়ালি আচরণ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। কিন্তু সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেলে তা দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি ডেকে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষকে পুরোপুরি টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। বেশিরভাগকেই দেওয়া হয়েছে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা। আর তাতেই সেখানে ছয়মাসে কোভিড শনাক্তের হার কমে গেছে ৯৪ শতাংশ। ইসরায়েলও খুব দ্রুতই বেশির ভাগ মানুষকে ফাইজারের টিকা দিয়েছে। দেশটিতে এখন দৈনিক নতুন করোনা শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে প্রতি ১০ লাখে প্রায় ৪ দশমিক ৯৫ জনে।
অথচ, চীনের সিনোফার্ম কোম্পানির তৈরি করোনা টিকা ব্যবহার করা সেশেলস- এ এখন করোনা শনাক্তের হার প্রতি ১০ লাখে ৭১৬ জন। টিকাকরণের পরও এমন অসমতার ফলে মহামারী বিধ্বস্ত এই বিশ্বে তিন ধরনের দেশের উদ্ভব ঘটতে পারে। এক. ধনী দেশগুলো- যারা ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার টিকা নিজেদের হাতে রাখতে সচেষ্ট। দুই. গরিব দেশগুলো- যাদের বেশিরভাগ নাগরিককে টিকার আওতায় আনা এখনও অনেক দূরের পথ। আর তিন. সেইসব দেশ- যারা তাদের নাগরিকদের পুরোপুরি টিকাকরণ করেছে কিন্তু সুরক্ষা পাচ্ছে অংশিক।চীনসহ বিশ্বের ৯০ টিরও বেশি দেশ যারা চীনা টিকা নিয়েছে, তারা শেষ পর্যন্ত চলে যেতে পারে এই তৃতীয় ধরনের দেশগুলোর দলে। ফলে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর হয়ত দেশগুলোকে সেই লকডাউন, করোনা পরীক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরার সীমাবদ্ধতার বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে হবে। তাছাড়া, চীনের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে নাগরিকরা উত্তোরত্তর প্রশ্ন তুলতে শুরু করলে যারা টিকা নেয়নি তাদেরকে টিকা নিতে রাজি করানোটাও দেশগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে।