ছেলেকে উদ্ধারে স্কুটিতে ১৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দিলেন মা
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১০, ২০২০ , ১১:১১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব
দিনের শেষে ডেস্ক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতে ২১ দিনের লকডাউন চলছে। প্রতিটি রাজ্যের পুলিশও কঠোরভাবে লকডাউনের এই নির্দেশিকাগুলো যাতে মানুষ মেনে চলে সে ব্যাপারে নজর রাখছে, অনুসরণ করছে। এই সময়ে, শুধু অত্যবশ্যকীয় পণ্য পরিবহণে ছাড় রয়েছে। হঠাৎ করে এই লকডাউন জারি হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষ নিজের ঘরবাড়ি থেকে দূরে আটকে পড়েছেন। ঠিক যেমন তেলেঙ্গানা থেকে অন্ধ্র প্রদেশ গিয়ে আটকে পড়ে এক কিশোর। কিন্তু ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে ত্রাতা হলেন তার মা। রাজিয়া বেগম নামের ওই নারী নিজের ছেলেকে উদ্ধারের জন্যে স্থানীয় পুলিশের অনুমতি নিয়ে নিজের স্কুটিতে করে অন্ধ্র প্রদেশের নেল্লোরে যান। একাই ১ হাজার ৪০০ কিমি পাড়ি দেন তিনি। শেষপর্যন্ত ছেলেকে স্কুটির পিছনে বসিয়ে বাড়ি ফেরেন রাজিয়া। সোমবার থেকে বুধবার, ছেলেকে ঘরে ফেরানোর জন্যে যেন ৩ দিনের এক যুদ্ধ জয় করলেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এখবর জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৯৯ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৪১২ জন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চিনের উহান প্রদেশে প্রথম ধরা পড়ে এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ। তারপর সেখান থেকে গোটা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তা। রাজিয়া বেগম নামে বছর আটচল্লিশের ওই নারী বলেন, একটি ছোট দু-চাকার গাড়িতে একা একজন নারীর পক্ষে এই সফর মোটেই সহজ ছিল না। তবে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেই হবে, আমার এই অদম্য ইচ্ছার সামনে সব ভয় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। আমি সঙ্গে শুধু কয়েকটি রুটি নিয়ে রাস্তায় নামি। রাতে যানজট নেই, রাস্তায় কোনও লোক নেই, যদিও রাস্তাঘাট এত ফাঁকা থাকায় ভয়-ভয় করছিল, তবে আমি আমার সিদ্ধান্তে স্থির ছিলাম। রাজিয়া হায়দরাবাদ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে নিজামবাদে একটি সরকারি স্কুলে চাকরি করেন। ১৫ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। তারপর থেকে দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে একা হাতেই জীবনযুদ্ধে লড়ে চলেছেন তিনি। তার বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং ছোট ছেলে নিজামুদ্দিন, যাকে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন সে ১৯ বছরের, পড়াশোনা করে চিকিৎসক হতে চায় সে। নিজামুদ্দিন কিছুদিন আগেই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং এখন সে এমবিবিএসের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করার জন্যে বিশেষ কোচিং নিচ্ছে। সে গত ১২ মার্চ নেল্লোরের রহমতবাদে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে কিছুদিন তার সঙ্গে ছিলও সে। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই করোনার কারণে গোটা দেশে লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় বন্ধুর বাড়িতেই আটকে পড়ে সে। সে চাইছিল বাড়ি ফিরতে, কিন্তু কোনও যানবাহন না থাকায় ফেরার কোনও উপায় ছিল না। ছেলের এই অবস্থা দেখে রাজিয়া বেগম ঠিক করেন যে তিনি ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। পুলিশের ভয়ে তিনি বড় ছেলেকে না পাঠিয়ে নিজেই স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ৬ এপ্রিল সকালে তিনি তেলেঙ্গানার বাড়ি থেকে বের হন, সারা দিন স্কুটি চালিয়ে পরদিন বিকালে নেল্লোর পৌঁছান তিনি। তারপর সেখান থেকে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ফের বাড়ির দিকে রওনা হন তিনি। বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন ছেলেকে নিয়ে।