ছোট্ট সুরাইয়ার স্বপ্ন পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ৯, ২০২৩ , ৫:০১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : মা-বাবার সঙ্গে নদীর পাড়ে একটি ছাপড়া ঘরে থাকতো দশম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া। জোড়াতালির ছাপড়া ঘর বাতাসে উড়ে যেতো। আবার বৃষ্টি এলে ভিজতো ঘরের ভেতর। নিজেদের একটুকরো জমিও ছিলো না, ছিলো না কোনো আবাস। ছোট্ট সুরাইয়া স্বপ্ন দেখতো, একদিন চাকরি করে মা-বাবাকে ঘর বানিয়ে উপহার দেবেন। তবে এর আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় এখন তাদের জমিসহ আধা পাকা বাড়ি হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনার মডেল ‘আশ্রয়ন প্রকল্পে’র অধীনে ঘর পেয়ে এখন সুরাইয়ার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি যেন তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে আরও ২২ হাজার ১০১টি বাড়ি হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্েয একটি ঘর পেয়েছে সুরাইয়ার পরিবার। খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারাসত সোনার বাংলা পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সুরাইয়া আক্ততার জুঁই জানান, তারা বাবা লবণ মিলের শ্রমিক। মা অন্যের বাড়ি কাজ করেন। সে বলে, ‘নদীর পাড়ে ছাপড়া ঘরে থাকতাম। পানি পড়তো। বাবা বলতো আমরা একদিন বাড়ি বানাবো। কিন্তু বাড়ি আর বানানো হয়নি। স্বপ্ন ছিলো পড়ালেখা করে চাকরি করে একটি ঘর বানিয়ে মা-বাবাকে করে দেবো। এখন আমরা ঘর পেয়েছি, খাবার পানি পেয়েছি, বিদ্যুৎ পেয়েছি। এখন আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারবো। মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। এ সময় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সুরাইয়া বলেন, ‘সারা জীবন আপনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকুন।’ প্রধানমন্ত্রী সুরাইয়াকে পড়াশোনা করে স্বপ্ন পূরণের জন্য দোয়া করেন। একই জায়গায় ঘর পেয়েছেন ভ্যানচালক ইমদাদুল শেখ। ভূমিহীন ইমদাদের এমন একটি সেমি পাকা বাড়ির স্বপ্ন ছিলো দীর্ঘদিনের। ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত ইমদাদ বলেন, নিজের কোনো জায়গা জমি, ঘর বাড়ি ছিলো না। পরের বাড়িতে থাকতাম। সারা দিন পরিশ্রম করে বাড়িতে এসে থাকতে পারতাম না। সংসার চলতো না যে ইনকাম করতাম। দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতাম। আর ভাবতাম আমার কি কোনোদিন মাথা গোজার ঠাঁই হবে না? ‘দুই শতক জায়গার ওপর পাকা বাড়ি, সুপেয় পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সরকারি সহায়তা পেয়েছি। আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি ভ্যান চালিয়ে দুই শতক জায়গার মালিক হবো। একটি পাকা বাড়ির মালিক হবো। আপনি আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আপনি আমার মা। মা যেমন সন্তানদের লালন-পালন করেন সেভাবে আমাদের আগলে রেখেছেন। ঘর পেয়ে এখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখেন ইমদাদ। ‘আমি ভ্যান চালাই। পাশাপাশি আমার স্ত্রী ঘরের সামনে শাকসবজি চাষ করে। এখন আমার সংসার ভালো চলে। সন্তানদের কিছু দিতে পারি, তারা ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারে। আমি আপনার জন্য দোয়া করি। যতোদিন বেঁচে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী হয়ে বেঁচে থাকবেন। আজকে ঘর উপহার দেওয়ার মাধ্যমে ৪১টি জেলার আরও ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন ঘোষণা করা হলো, যার ফলে মোট উপজেলার সংখ্যা হবে ৩৩৪টি এবং এই ১২টি জেলাসহ সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ২১টিতে। এর ফলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১ জন পরিবার ভূমিসহ স্থায়ী ঘর পেলো, যাদের থাকার জন্য নিজের কোনো জায়গা ছিলো না। ২৩ জানুয়ারি, ২০২১-এ প্রথম পর্যায়ে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, ২০ জুন, ২০২১-এ দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং মুজিববর্ষ-এর সময় তৃতীয় পর্যায়ে দুই ধাপে মোট ৫৯ হাজার ১৩৩টি বাড়ি বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২২ হাজার ১০১টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প বিশ্বে একটি অনন্য প্রকল্প, কারণ পৃথিবীর আর কোনো দেশে এতো বিপুল সংখ্যক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়ি বিতরণ করা হয়নি। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপের আওতায় এটি দ্বিতীয় পর্যায় এবং ২২ মার্চ, ২০২৩-এ দ্বিতীয় ধাপের অধীনে প্রথম দফায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারাসত সোনার বাংলা পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাগ্রহীতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করেন এবং এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরাসহ আরও নয়টি জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়ি ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জন (আনুমানিক একটি পরিবারে পাঁচজন ব্যক্তি হিসেবে)। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প ইতিমধ্যে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ পরিবারকে সরাসরি পুনর্বাসন করেছে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।