জিডিপি সাফল্য আশাব্যঞ্জক
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ১৭, ২০২০ , ২:১২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সাফল্যে বাংলাদেশ বিশ্বে অপ্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এশিয়ার তৃতীয় বড় অর্থনীতির দেশ ভারতকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুকে এ তথ্য জানানো হয়। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ জাতিসংঘের প্রাথমিক স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই স্বীকৃতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতেও। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে মাথাপিছু আয় ও মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পরিমাণে অর্জিত হয়েছে বর্তমান সরকার আমলে। এমন অর্জন সরকারের মুকুটে সাফল্যের পালক যোগ করেছে। এর জন্য সরকারের অভিনন্দন প্রাপ্য। আইএমএফের হিসাবে ২০২০ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশে। এতে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার। সেখানে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে মাইনাস ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এর ফলে ভারতে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০০ ডলার থেকে কমে হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার। বাংলাদেশে এমন প্রবৃদ্ধির অর্জনের নজিরও সাম্প্রতিক বিশ্বে বিরল। মূলত জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কারণেই মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। জনগণের সর্বমোট ব্যক্তিগত আয়কে জনপ্রতি ভাগ দিয়ে মাথাপিছু আয় নির্ধারণ হয়ে থাকে। তবে প্রকট বৈষম্যের এ সমাজে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সুফল সবাই পাচ্ছেন কিনা সেটা বড় প্রশ্ন। বিশ্লেষকদের মতে, জিডিপি বাড়লেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। সামাজিক বৈষম্যের এই দুষ্টচক্র ভাঙতে না পারলে সংকট আরো তীব্র হতে পারে। একদিকে দারিদ্র্য কমছে, অন্যদিকে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। মূলত সম্পদের অসম বণ্টন এবং অবৈধ আয়ের উৎসের কারণে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। জিডিপির ঊর্ধ্বগতির সুফল সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য ঘুষ, দুর্নীতি, কর ফাঁকির বিষয়টি কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। বর্তমান সরকার যে দারিদ্র্য বিমোচনে তৎপর সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। নানা বাধা-বিপত্তি সত্তে¡ও অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলোতে উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বাণিজ্য, বৈদেশিক আয় ইত্যাদি খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে আগের তুলনায়। আমরা অবশ্যই প্রত্যাশা করি, এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক। পাশাপাশি জরুরি হচ্ছে, বৈষম্য কমাতে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।