ঝিনাইদহে পুকুরের মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ২৬, ২০২০ , ২:২৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : জেলেরা জাল টেনে পুকুরের কিনারায় আনতেই সবাই অবাক। বড় বড় সাইজের গলদা চিংড়ি। পুকুরের মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ! এ দেখেই সবাই অবাক। শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামে সোহাগ মৎস্য খামারে গলদা চিংড়ি ধরাকে কেন্দ্র করে এমনই উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। পুকুরের গলদা চিংড়ি দেখতে ও কিনতে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি শহর থেকেও লোকজন এসেছিল। জেলায় এই প্রথম পুকুরে গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। পুকুর থেকে মাছ ধরা হচ্ছে। সোহাগ কুমার বিশ্বাস জানান, তার বাবা স্বপন কুমার বিশ্বাস ৪ বছর ধরে পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে আসছিলেন। সেই সূত্রে তিনিও মাছ চাষ করে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা আইইউবিএটি থেকে কৃষিতে অনার্স শেষ করলেও ইন্টার্ন করেন মৎস্য চাষের ওপর। ২০১৮ সালে মোংলায় গাজী ফিস ফার্ম থেকে ইন্টার্ন শেষে গ্রামে ফিরে এসে বাবার সঙ্গে মাছ চাষ শুরু করেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তিনি পাবদা ও গুলশা মাছের চাষ করেন। কার্প জাতীয় মাছের তুলনায় এ জাতীয় মাছ চাষে অধিক মুনাফাও পেয়েছেন। এবছর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজার পরামর্শে ৬৬ শতাংশ জলকরে গলদা চিংড়ির সঙ্গে রুই, কাতলা ও সিলভার কার্প মাছের চাষ করেন। তিনি জানান, এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ৬৬ শতাংশের একটি পুকুরে বাগেরহাটের একটি মৎস্য খামার থেকে পিএল সাইজের (১০০টিতে কেজি) ৩২০০ পিস গলদা চিংড়ি এবং ৩ হাজার পিছ কার্প জাতীয় মাছ ছাড়া হয়। প্রতিটি গলদা চিংড়ি ১৮ টাকা দরে কেনা হয়। পুকুর প্রস্তুতকরণ, মাছের খাবার, প্রোবায়োটিক ও শ্রমিক খরচ বাবদ ৭ মাসে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সময় মতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যা করায় মাছের ওজনও ভালো এসেছে। পুকুর থেকে সাড়ে ৩০০ কেজি চিংড়ি ও এক হাজার কেজি কার্প জাতীয় মাছ পাবেন বলে আশা করছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে চিংড়ি থেকে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা ও কার্প জাতীয় মাছ থেকে আরও ৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যাবে।
খাবার ব্যবস্থাপনা নিয়ে সোহাগ বলেন, প্রতিদিন সকাল ১০টা ও সন্ধ্যা ৭টায় চিংড়ির ফিড ও বিকাল ৪টার সময় ভাসমান ফিড দিতেন। মাছের ওজন অনুযায়ী খাবার দিতে হয়। প্রতি ১০০ কেজি মাছের ওজনে দিনে ৩-৪ কেজি ফিড দিতে হয়। এছাড়া অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিলে অ্যারেটর ব্যবহার করে অক্সিজেনের জোগান দিতে হয়। গলদা চিংড়িতে তেমন কোনও রোগবালাই দেখা যায়নি।
মাছের বাজারজাতকরণ নিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে গলদা চিংড়ির বাজার সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তাই তার মৎস্য খামারে উৎপাদিত গলদা চিংড়ি বিক্রির জন্য সাতক্ষীরা চুকনগরে এক মাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি প্রতি কেজি চিংড়ি এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা দর দিতে চেয়েছেন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সব মাছ ধরা হবে। রুই-কাতলা ও সিলভার কার্প মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হবে। চিংড়ি সাতক্ষীরাতে পাঠানো হবে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজা জানান, কালীগঞ্জের মাটি, পানি ও আবহাওয়া গলদা চিংড়ি চাষের উপযোগী। গলদা চিংড়ি চাষ লাভজনক হওয়ায় উপজেলার মৎস্য চাষিদের চিংড়ি চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। কেউ চিংড়ি চাষে এগিয়ে আসলে উপজেলা মৎস্য অফিস তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করবে।