আজকের দিন তারিখ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য ঝুঁকিতে শেয়ার বাজার: আবার আইন ভেঙে বিনিয়োগ করছে ব্যাংক

ঝুঁকিতে শেয়ার বাজার: আবার আইন ভেঙে বিনিয়োগ করছে ব্যাংক


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১ , ১২:৪২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : ইভ্যালির প্রতারণা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। এমন সময়ে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে শেয়ারবাজারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আইনি সীমা লঙ্ঘন করে আবারও বেশ কয়েকটি ব্যাংককে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে। জানা গেছে, ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিপুল বিনিয়োগ ছিল পুঁজিবাজারে। সে সময় আইনি সীমা লঙ্ঘন করে অধিকাংশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে হঠাৎ করেই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা শুরু করলে ধস নামে পুঁজিবাজারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এনআরবি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক আইনি সীমা লঙ্ঘন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক দুটিকে জরিমানা করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংককে সতর্ক করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারের ওপর। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি সিদ্ধান্তের কারণে গত সপ্তাহে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। অর্থাৎ টানা ছয় সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গেলো সপ্তাহ কিছুটা পতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এর আগে টানা ছয় সপ্তাহের উত্থানে ডিএসই’র বাজার মূলধন ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছিল। অবশ্য এর আগে ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধস নামার পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকে দায়ী করা হতো। এরপর থেকে দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ছিল পরস্পরবিরোধী অবস্থানে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, সম্প্রতি ব্যাংক কোম্পানি আইনের সীমা লঙ্ঘন করে পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্সের শেয়ারে বিনিয়োগ করার অভিযোগে এনআরবি ব্যাংককে ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর কয়েক দিন আগে শেয়ারবাজারে নির্ধারিত সীমার বেশি বিনিয়োগ করার দায়ে এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংককে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আরও কয়েকটি ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অদাবিকৃত বা অবন্টিত লভ্যাংশ ‘স্থিতিশীল তহবিলে’ জমা করা নিয়ে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে বৈপরীত্য শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী অদাবিকৃত লভ্যাংশের অর্থ শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতায় গঠিত তহবিলে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এ ধরনের অর্থ তহবিলে জমা দিয়েছে, তা-ও ফেরত আনার কথা বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, এ টাকা বিনিয়োগকারীর। শেয়ারবাজারের তহবিলেই এ অর্থ স্থানান্তর করা যুক্তিযুক্ত। বিএসইসি অবন্টিত লভ্যাংশ শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য গঠিত তহবিলে ফেরত আনতে চায়। এ জন্য নতুন করে আইনি বিধানও করেছে সংস্থাটি।
দুই সংস্থার এমন অবস্থানের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই সংস্থা মধ্যে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে গত আগস্টেও বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনা ঘিরে দুই সংস্থার সমন্বয়হীনতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে প্রতিদিন প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেয়। সেই সঙ্গে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ খতিয়ে দেখতে ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস পরিদর্শনও শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই ব্যবস্থার পর শেয়ারবাজারে যাতে পতন না হয়, সে জন্য শেয়ারের বিপরীতে সর্বোচ্চ ঋণসীমার আওতা বাড়িয়ে সূচকের ৮ হাজার পয়েন্ট পর্যন্ত উন্নীত করা হয়।
এদিকে সপ্তাহ শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেলো সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ১১ কোটি ৮৪৩ কোটি টাকা। আগের ছয় সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ৫১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা মূলধন বাড়ার পর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা কমলো।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮২টির। আর ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স কমেছে ৩০ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৭৭ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গেলো সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ১৫ দশমিক ২১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৮৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। অপরদিকে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের সপ্তাহেও বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ২৭ দশমিক ৪১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৫০ দশমিক ৩০ পয়েন্ট।
গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ২২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় দুই হাজার ৭৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৫৫৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১১ হাজার ১২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১৩ হাজার ৮৮৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে দুই হাজার ৭৬৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।