আজকের দিন তারিখ ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় ঝুমন দাশ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

ঝুমন দাশ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ৩, ২০২১ , ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা ঝুমন দাশ হাইকোর্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে ১ বছরের জন্য জামিন পেয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতের অনুমতি ছাড়া আগামী ১ বছরের জন্য নিজ জেলা সুনামগঞ্জের বাইরে যেতে পারবেন না ঝুমন দাশ। জানা গেছে, গত ১৬ মার্চ ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগ তুলে ১৭ মার্চ নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালানো হয়। তার আগে ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে আটক করা হয়। ২২ মার্চ শাল্লা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ। পেছনে ফিরে দেখি, ঝুমন দাশ ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল গংয়ের সন্ত্রাস নৈরাজ্য নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। এর ফলে মামনুলের উগ্রবাদী ভক্তরা হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার পরিকল্পনা করে, যা স্থানীয় পুলিশের আগে থেকেই জানা ছিল। সম্ভাব্য হামলা থেকে বাঁচতে গ্রামবাসীই ঝুমন দাশকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আগাম সব তথ্য থাকার পরও হামলা ঠেকানোর ব্যবস্থা না নিলেও পুলিশ ঝুমন দাশকে প্রথমে ৫৪ ধারায় আটক দেখায়। তারপরও নোয়াগাঁও গ্রামের সংখ্যালঘুদের ঘর-বাড়িতে মামুনুলের ভক্তরা হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করে। এ হামলার ঘটনায় প্রমাণিত হয় ঝুমন দাশের ফেসবুক পোস্ট সঠিক ছিল। তবুও পরবর্তীতে পুলিশই ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে ৫ দিন পর। অথচ ঝুমনের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দিতে পারেনি এখনো। অথচ ঝুমন দাশদের গ্রামে হামলাকারীদের মধ্য থেকে গ্রেপ্তার ৫২ জনই জামিনে বের হয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ঝুমন দাশের স্ত্রীসহ তার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। ঝুমন দাশকে গ্রেপ্তারের পর থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কথা উঠছে। ঝুমন দাশের মতো এমন ঘটনাগুলো প্রমাণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে বলে আমরা মনে করি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আইনের কয়েকটি ধারার অপপ্রয়োগ চলছে। যার অন্যতম নজির ঝুমন দাশ কিংবা লেখক মুশতাকের মৃত্যু। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি জাতীয় সংসদে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পাস হয়। তখন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এবং মানবাধিকার সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, এই আইনের এমন কিছু ধারা আছে, যা বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ। আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয় এবং ২৫ ও ২৯সহ চিহ্নিত ধারাগুলো সংশোধনের দাবি জানানো হয়। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়, আইনের কোনো অপব্যবহার হবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ঝুমন দাশের কী অপরাধ? বিনা অপরাধে তাকে জেল খাটতে হয়েছে। এর পেছনে জড়িতদের শাস্তির দাবি করছি। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি খবরে জানা যায়, ঝুমন দাশের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এমতাবস্থায় তার পরিবারকে নিরাপত্তা দেয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। আমরা এটাও দাবি করছি ঝুমন দাশকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেয়া হোক।