ডেঙ্গু কেড়ে নিচ্ছে চিকিৎসকদের প্রাণ, উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ১২, ২০২৩ , ৪:২৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
দিনের শেষে প্রতিবেদক : ডেঙ্গুতে একের পর এক মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সবশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় প্রতিষ্ঠানটির মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শরিফা বিনতে আজিজের। বিষয়টিকে চরম উদ্বেগের বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সংকটের এই সময়ে চিকিৎসকদের মনোবল ধরে রাখতে কাজের চাপ কমিয়ে জনবল বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন তারা। মানবসেবার ব্রত নিয়ে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হন শরিফা বিনতে আজিজ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে পাশে দাঁড়ান ডেঙ্গু রোগীদের। এক পর্যায়ে নিজেও শিকার হন মরণঘাতী এডিসের। একই হাসপাতালের আইসিইউতে মাত্র ২৭ বছর বয়সে নিভে যায় জীবন প্রদীপ। এর আগে গত সোমবার (৭ আগস্ট) ডেঙ্গু এনসেফালাইটিস হয়ে একই হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যু হয় স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ দেওয়ান আলমিনার। মাত্র ৩২ বছর বয়সে ছোট্ট দুটি কন্যা সন্তান আর সাজানো গোছানো সুখের সংসারের মায়া ত্যাগ করেন তিনি। আলমিনা কিংবা শরিফাই নন, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। আর যারা এই মুহূর্তে রোগীর সেবা দিচ্ছেন তারাও কাজ করছেন অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে। অনেকে ডেঙ্গু নিয়েও সেবা দিয়েছেন রোগীর। আবার অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের ঘরে ফেলে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন হাসপাতালে। সব মিলিয়ে ডেঙ্গুতে মহাসংকটের এক সময় পার করছেন সম্মুখসারীর এই যোদ্ধারা। তাদের একজন বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েও অনেকে ডিউটি করছি। শুধু তাই নয়, ডিউটির সময় একটু বিশ্রাম নেয়ার সময় পাচ্ছি না। সব বিপর্যয়ের মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি যেন ডেঙ্গুকে তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এদিকে, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী ও হাসপাতালের স্টাফরা একের পর এক ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় চাপ পড়েছে হাসপাতালে। ব্যাহত হচ্ছে রোগীর সেবাও। সংকটের এই সময়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জেষ্ঠ্য চিকিৎসকরা। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, আমার এখানে কর্মচারী থেকে শুরু করে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন যে কাজটা করছি, সেটা হচ্ছে ওয়ার্ড ভিত্তিক যে রোস্টার ছিল, সেটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় একটি রোস্টার করা হয়েছে। সে কারণে কোথাও কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে অন্য একজনকে রিপ্লেস করা যাচ্ছে। কারণ সেবাটি বন্ধ করার সুযোগ নেই। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, পরিবেশ যত প্রতিকূল অবস্থাই হোক না কেন, চিকিৎসা কার্যক্রম তো চালিয়ে যেতে হবে। এখানে আমার অনুরোধ হলো, যেন ভালো কাজের পরিবেশ তৈরি করা হয়। যে হারে রোগী বেড়ে যাচ্ছে, তাতে কিন্তু চিকিৎসদের জন্য অতিরিক্ত চাপ হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য জনবল বাড়ানো দরকার। চিকিৎসার সংকট যেন না হয়, তাই নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী বাড়াতে হবে। এ ছাড়াও কিটের যে সংকট, সেটাও কিন্তু দূর করতে হবে। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০ হাজার।