আজকের দিন তারিখ ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
বিনোদন তদন্তকাজে যোগাযোগ এরপর প্রেমে, সাকলায়েনকাণ্ডে বিব্রত পুলিশ

তদন্তকাজে যোগাযোগ এরপর প্রেমে, সাকলায়েনকাণ্ডে বিব্রত পুলিশ


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: বিনোদন


দিনের শেষে প্রতিবেদক :   বিতর্কিত ও আলোচিত চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরী মনির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন শিথিলের অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার গুলশান অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনারের (এডিসি) দায়িত্বে ছিলেন। আশুলিয়ার বোট ক্লাবকাণ্ডে সাভার মডেল থানায় পরীমনির করা মামলার তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সাকলায়েন তদন্তে সহায়তার নামে এই চিত্রনায়িকার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। এই ঘটনায় বিব্রত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সমালোচনার মুখে গতকাল শনিবার ডিএমপির এডিসি গোলাম সাকলায়েন শিথিলকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। গঠন করা হচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। যার দায়িত্বে আছেন ডিএমপির একজন অতিরিক্ত কমিশনার। পরীমনি, পিয়াসা ও মৌ-এর তৎপরতার তদন্তে নেমে আরো কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার ব্যাপারেও খোঁজখবর শুরু হয়েছে বলেও চাউর রয়েছে। ২২টি ফ্লপ সিনেমার নায়িকা পরীমনির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা শিথিলের রাজারবাগের সরকারি ফ্ল্যাটে ১৮ ঘণ্টা সময় কাটানো, হাতিরঝিলে গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, মদপান ও গত কুরবানির ঈদে পরীমনির বাসায় তিন দিন কাটানো- সবমিলিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তদন্ত ও তদারকির নামে বাদীর সঙ্গে এমন কাণ্ডে বিব্রত পুলিশ।

এদিকে ঘটনাটিকে অনৈতিক কাজ অভিহিত করে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন তারা। ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানিয়েছেন, ডিএমপি কমিশনারের সিদ্ধান্তে এডিসি গোলাম সাকলায়েনকে ডিবির সব কার্যক্রম থেকে নিবৃত্ত করা হয়েছে। এছাড়া তাকে পিওএম পশ্চিমে পদায়িত করা হয়েছে। এ ঘটনায় অবশ্যই তদন্ত কমিটি করা হবে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি হেফাজতে রিমান্ডে আছেন নায়িকা পরী মনি। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, পরী মনি এখন আসামি। তবে এর আগে অন্য একটা মামলায় তিনি বাদী ছিলেন। ঘটনাক্রমে একজন মামলার বাদীর সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তার পরিণয় ঘটেছে- এ বিষয়গুলো কি আপনাদের তদন্তে উঠে আসবে- এমন প্রশ্নে ওমর ফারুক বলেন, অবশ্যই উঠে আসবে। মামলাটি আমরা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করব। সে কারণে মামলা ও আসামি সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে যা প্রকাশ পাবে সে বিষয়গুলো তদন্তে আসামিসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি বলেন, সেটা যদি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও হয় তাহলেও আমলে নেওয়া হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সে যেই হোক না কেন। আমরা চাই নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করতে।

র‌্যাবের অভিযানে আটকের আগে পরীমনির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে ডিবি (উত্তর) জোনের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদের কাছে সাহায্য ও পরামর্শ চেয়ে ফোনের বিষয়টি উঠে আসে। সাকলাইন-পরীমনিকাণ্ড বিষয়ে প্রশ্ন করলে হারুন অর রশীদ এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে ডিএমপি সদর দপ্তর ও ডিবির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নায়িকা পরীমনির করা মামলার তদন্তের তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন ডিবির এ কর্মকর্তা। এমতাবস্থায় কোনোভাবেই মামলার বাদীর সঙ্গে এমন ঘটনা কাম্য হতে পারে না। গোলাম সাকলায়েন শিথিল একজন মেধাবী অফিসার। তার স্ত্রী নারায়ণগঞ্জের একটি উপজেলার নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, সাকলায়েনের বাসায় নায়িকা পরীমনির যাতায়াতের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, গত ১ আগস্ট সকাল সোয়া ৮টায় পরীমনির সাদা রংয়ের হ্যারিয়ার গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫ ৯৬ ৫৩) নিয়ে গোলাম সাকলায়েনের রাজারবাগের অফিসার্স কলোনির মধুমতি ভবনের ৯/সি নম্বর সরকারি ফ্ল্যাটে আসেন। প্রথমে সেই গাড়ি থেকে লাল রংয়ের টি-শার্ট পরে বের হন সাকলায়েন। সাদা রংয়ের একটি স্লিপিং গাউন পরে নামেন নায়িকা পরীমনি। সেই রাতে সোয়া ২টায় ওই ভবন থেকে বের হন পরীমনি। তবে রাতে বের হওয়ার সময় পরীমনির পরনে ছিল কালো রংয়ের পোশাক, আর সাকলায়েনের গায়ে সাদা টি-শার্ট। সম্প্রতি ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদেও পরীমনি সাকলায়েনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনির সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুও এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন।

ডিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, বোট ক্লাবের মামলা তদন্তের সময় সাকলায়েন নিজেকে অবিবাহিত দাবি করেন। তদন্তকাজে যোগাযোগ পরে প্রেমে পরিণত হয়। কিন্তু সাকলায়েন বিবাহিত, বিষয়টি জানার পর পরী মনি ও তার মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। পরে র‌্যাবের অভিযানে পরী মনির সঙ্গে গ্রেপ্তার তার সহযোগী দীপুর উদ্যোগে দুজনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। গত কুরবানির ঈদের সময় পরী মনির বাসায় তিন দিন ছিলেন সাকলায়েন। তখন বাসায় তারা ছাড়া আর কেউ ছিল না। এ বিষয়ে পরীমনির গাড়িচালক নাজির হোসেন বলেন, রাজারবাগ পুলিশ কোয়ার্টারে পরী মনিকে গত ১ আগস্ট সকালে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আবার রাতে পরী মনির ফোন পেয়ে তাকে আনতে যান। এছাড়া তারা দুজনই গাড়ি চালাতে পারেন। তারা মাঝেমধ্যেই আমাকে রেখে নিজেরা ড্রাইভ করে হাতিরঝিলে ঘুরতে যেত। গাড়ি চালানো অবস্থায় তারা কোনো কথা বলতেন না। তবে গাড়িতে মদ্যপান করতেন। আবার মাঝেমধ্যে তারা একা গাড়ি নিয়ে বের হতেন।

গোলাম সাকলায়েন শিথিল ৩০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান লাভ করেন। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের পদ্মার পাড়ে তার জন্ম। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়া সাকলায়েন ২০০১ সালে সারদা গভ. পাইলট একাডেমি হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এইচএসসি পাসের পর আর্মিতে কমিশন পদে পরীক্ষায় অংশ নেন। সব ধাপ সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করে যোগ দেন আইএসএসবি-৫৯ লং কোর্সে মিলিটারি একাডেমিতে। কিন্তু পরে সেখান থেকে চলে আসেন তিনি। প্রস্তুতি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হন তিনি। পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষায় প্রথম হন। একই সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে সফল হন সহকারী উপজেলা অফিসারে। পোস্টিং হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেখানে সহকারী উপজেলা অফিসার থাকা অবস্থায়ই দেন ৩০তম বিসিএস।

অন্যদিকে পরী মনি ছাড়াও পিয়াসা, মৌ ও নজরুল ইসলাম রাজের কাছ থেকে মিলছে বিব্রতকর তথ্য। বিতর্কিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাদের জবানিতে রাতের আড্ডা ও পার্টিতে অনেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তাদের আনাগোনার খবর মিলছে বলে জানা গেছে। তাদের দেয়া তথ্যে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বিব্রত।