তিস্তার বালুচর এখন কৃষকের জন্য আশীর্বাদ
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২১ , ১২:৪২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
রংপুর প্রতিনিধি : তিস্তায় জেগে উঠা ফুটন্ত বালুচর এখন কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। চরের বুকে ফলানো হচ্ছে বাদাম, গম, ভুট্টা, ধান, মরিচ ও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি। চারদিকে এখন সবুজের সমারোহ। চরের ফসলের গুণগত মান ভাল হওয়ায় বাজারে চাহিদা ও দামও বেশী।
জানা গেছে, তিস্তা চরের বাসিন্দাদের জীবন এক সময় অভিশপ্ত ছিল। তারা সবসময় দুর্বিষহ জীবনযাপন করতেন। এখন তারা চরের ফুটন্ত বালুতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিবছর খরস্রোতা তিস্তার দু’পাড়ের বাসিন্দাদের বন্যায় ফসলহানী ও নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হতে হয়। ধুধু বালুচরে তেমন কোনও চাষাবাদ করা যেতো না। ফলে তিস্তার দু’পাড়ের বাসিন্দাদের দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হতো। অনেকে সহায় সম্বল হারিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভাসমানদের তালিকায় নাম লেখাতেন। সেই অভিশপ্ত তিস্তা এখন মানুষের আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরের বালু এখন সোনার সাথে তুলনা করা হচ্ছে। তিস্তা নদীর অধিকাংশ এলাকাজুড়ে এখন চর। আরও জানা গেছে, চলতি শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় খরস্রোতা তিস্তা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ চরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সামান্য খালের মধ্যে হাঁটু পানি পার হলেই এখন তিস্তা নদী পাড়ি দেয়া যায়। সম্পূর্ণ নদী জুড়ে চর আর চর। জেগে উঠা চরের জমিতে ফলানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। তাই নদী পাড়ের মানুষদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। প্রায় প্রত্যেকেই ফুটন্ত বালুতে ফসল ফলিয়ে সাবলম্বী হচ্ছেন।
তিস্তার চরে চাষাবাদ করা কৃষক মোন্নাফ মিয়া বলেন, ‘খরস্রোতা তিস্তার কারণে অনেকে এলাকা ছেড়েছেন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বন্যা আর নদী ভাঙন ও শুষ্ক মৌসমে ধুধু বালু চরের কারণে অনেকে নিঃস্ব হয়েছে। লোকজন তিস্তার হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেক দূরে গিয়ে বসতি গড়েছে। এখন তিস্তা মরা খালে পরিণত হওয়ায় প্রচুর চর ভেসে উঠেছে। চরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফসল হচ্ছে।’ তিস্তার চরের উত্তপ্ত বালুতে চাষ করা আলু ক্ষেত পরিচর্যাকারী হাসেম মিয়া জানান, তিস্তার চরে এখন সোনা ফলছে। চরে প্রায় সব ধরনের ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে। তবে ফসল উৎপাদনে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়।
চরের আর এক চাষি মোল্লা ফারুক বলেন, ‘আগে চরের জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হতো না। শুধু বালুর ক্ষেত নামে পরিচিত বাদাম ও কাউন চাষাবাদ করা হতো। এখন সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকায় ধান, গম ও ভুট্টার মতো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।’
রংপুর জেলার তিন উপজেলা গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার উপর দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এ তিন উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হন। নদীর দুই তীর প্লাবিত হয়ে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। শত শত একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়। একই সাথে তীব্র নদী ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা সত্যি কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। তিস্তার চরে এখন সব ধরনের ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রণোদনাসহ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে।’ রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সারোয়ারুল হক বলেন, ‘চরের জমিতে প্রতিবছর ভুট্টা, বাদাম, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, কুমড়া, ধান ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হচ্ছে। ফলনও ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে নদী শাসনের মাধ্যমে চরের এসব ফসলি জমিতে পরিকল্পিত চাষাবাদ করা গেলে রংপুরের কৃষি অর্থনীতি আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।’