আজকের দিন তারিখ ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় দুঃসময়ে পাটকল কেন বন্ধ হবে?

দুঃসময়ে পাটকল কেন বন্ধ হবে?


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২৮, ২০২০ , ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


করোনায় বিপর্যস্ত পুরো দেশ। লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে। শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধ ও চিকিৎসাসহ যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে পাটকল বন্ধ করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। জানা গেছে, প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। প্রক্রিয়াটি শেষ হলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) বা অন্য কোনোভাবে পাটকলগুলো চালানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। পাটকলের ব্যবস্থাপনাও বেসরকারি হাতে ছেড়ে দেয়া হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ক্রমাগত লোকসান দেয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার এগুলো সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) চালানোর যে চিন্তা করছে; সেটি কতটা বাস্তবসম্মত, তাও ভেবে দেখার বিষয়। বাংলাদেশে পিপিপি খুব ফলপ্রসূ হয়নি। পাটকলের ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হওয়ারও কোনো কারণ দেখি না। পাটকল নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলেও শ্রমিকদের দুঃখের দিন শেষ হচ্ছে না। বছরের পর বছর পাটকল শ্রমিকদের দফায় দফায় রাস্তায় আসতে হচ্ছে নিজেদের পাওনা মজুরির দাবিতে। বকেয়া মজুরিই শোধ করা হচ্ছে না। অন্যদিকে পাটকলগুলোতে লোকসানের বোঝা বাড়ছেই। কেন এই পরিস্থিতি? স্বাধীনতার পর থেকে পাটকলে যে লোকসান বাড়তেই থাকে, তার পেছনে বরং কয়েকটি কারণ সুনির্দিষ্ট করা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য; পাকিস্তান আমলে পাটশিল্পের জন্য যেসব সুবিধা ও ভর্তুকি ছিল, সেগুলো অব্যাহত না রাখা। যথাসময়ে পাট ক্রয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ না দেয়ায় বিলম্বে দুই বা তিনগুণ বেশি দামে পাট ক্রয়। মেশিনপত্র কোনোরকম নবায়ন না করা। উৎপাদিত পণ্যে বৈচিত্র্য না আনা। কারণগুলো চিহ্নিত হলেও সমাধানে উদ্যোগী না হওয়ায় লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাটকলগুলো ৪৯৭ কোটি টাকার লোকসান গুনেছে। পরের বছর সেই লোকসান বেড়ে ৫৭৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। লোকসানের চক্কর থেকে বের হতে না পারায় পাটকলের শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া পড়ে। গত চার বছরে পাটকল শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরি বকেয়া পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল আছে। পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন এ পাটকলগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। সরকার এই সংকটকালে এত শ্রমিকের বিকল্প কর্মসংস্থান কোথায় করবে, কীভাবে করবে? বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। শ্রমিকদের খাদ্য, চিকিৎসা ও যাবতীয় সামগ্রীর নিশ্চয়তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। ফলে সেই নিশ্চয়তা না দিয়ে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করছি। সরকার পাটকল বন্ধ না করে পাটকলগুলোর যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন করলেই উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। যথাসময়ে পাট ক্রয় করে আধুনিকায়ন করে লাভজনক করা সম্ভব। বর্তমান সরকার পাট খাতের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার কথা বলে আসছে অনেক দিন ধরেই। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কথাও আমরা জানি। পাটকলগুলো বাঁচাতে পাট ও শিল্প খাত উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে। পাটকলগুলোর সমস্যা-সংকট দূর করে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের ব্যবস্থা করে উৎপাদনমুখী হওয়ার উদ্যোগ নেয়া উচিত।