আজকের দিন তারিখ ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় দুইজন কৃতীর প্রয়াণ: তাদের কর্ম ও সাধনা প্রেরণা জোগাবে

দুইজন কৃতীর প্রয়াণ: তাদের কর্ম ও সাধনা প্রেরণা জোগাবে


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১ , ১২:৫৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


চলে গেলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। গতকাল ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ছিলেন। এর আগে মঙ্গলবার বিকালে সাংবাদিক, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ মারা যান। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ও সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশের পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দুই কৃতী মানুষের মৃত্যুতে আমরাও গভীরভাবে বেদনাহত, শোকাভিভ‚ত। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ১৯৪১ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভ‚গোলে স্নাতকোত্তর ও আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৬৩ সালে ব্যাংকিং পেশায় যুক্ত হন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সোনালী, অগ্রণী ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের পতনের কারণ অনুসন্ধানে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। ইব্রাহিম খালেদ নিজগুণে সারাদেশে সুপরিচিত। বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতের ভিত্তি স্থাপনে তিনি অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। সুদক্ষ ব্যাংকার ছিলেন। অত্যন্ত সৎ ও নীতিনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। স্বাধীনতার চেতনার সত্যিকার একজন ধারক ছিলেন। তার সত্যনিষ্ঠার কথা সুবিদিত। ছিলেন অনুচ্চকণ্ঠ, কিন্তু নীতি ও আদর্শের ব্যাপারে আপসহীন। তার মতো মানুষদের এ দেশের বড় প্রয়োজন ছিল। সৈয়দ মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জের শিবালয়ের এলাচিপুর গ্রামে জন্ম নেন। ১৮ বছর বয়সে ১৯৬৪ সালে ‘নবযুগ’ পত্রিকায় যোগ দেয়ার মাধ্যমে তার সাংবাদিকতার শুরু। লেখালেখির পাশাপাশি আমৃত্যু তিনি সক্রিয় ছিলেন সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং লেখালেখিতে। ২০১৩ সালে একা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি। এ আন্দোলনের পথ বেয়ে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন প্রণীত হয়। তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ রক্ষার আন্দোলনেও সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছলেও সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার ও ভুক্তভোগীদের দেখতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যেতেন তিনি। ২০০৩ সালে ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে সেলাইবিহীন সাদা কাপড় ধারণ করেন তিনি। সেই থেকে আমৃত্যু এই পোশাকই পরেছেন তিনি। গবেষক-প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জীবন, কর্মকাণ্ড, রাজনীতি ও দর্শন’, ‘ভাসানী কাহিনী’, ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য’, ‘স্মৃতিতে ওয়ালীউল্লাহ’, ‘কাগমারী সম্মেলন’ ইত্যাদি। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ও সৈয়দ আবুল মকসুদ আর আমাদের মাঝে নেই। তারা যে সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই সমাজ নির্মাণ প্রক্রিয়াকে যদি আমরা এগিয়ে নিতে পারি, সেটাই হবে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা। তাদের কর্ম ও সাধনা হোক আমাদের প্রেরণার উৎস।