দুর্ঘটনা রোধে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করতে হবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০ , ১:৫০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
পুরনো ও জরাজীর্ণ পাইপলাইনের কারণে একের পর এক গ্যাস দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সম্পদ। সর্বশেষ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গাফিলতির কারণেই নারায়ণগঞ্জে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা দেখতে হলো আমাদের। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, গাজীপুরে একাধিকবার গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের খবর গণমাধ্যমে দেখা গেলেও বাস্তবে কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। তথ্য মতে, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাইপলাইনের সাহায্যে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে ১৯৬০ সালে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শুরু হয়। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ শুরু ১৯৬৭ সালের দিকে, ঢাকায়। এরপর দেশজুড়ে গ্যাসের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাদেশে গ্যাস নেটওয়ার্কের পরিমাণ ২৪ হাজার ২৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে বিতরণ ও সার্ভিস লাইন প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার। এই লাইনের ৭০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের পাইপলাইনের অবস্থা শোচনীয়। মাটির নিচে সরবরাহ লাইনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির। বহু আগেই তিতাস গ্যাস বিতরণ লাইনের অর্ধেকের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। তার ওপর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নেই। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ ও লাইন স্থাপন গ্যাস নেটওয়ার্ককে আরো অনিরাপদ করে তুলেছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম-কুমিল্লাসহ আরো কয়েকটি জেলায় মাঝেমধ্যেই তিতাসের লাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। তিতাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। প্রতিনিয়ত তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার খবর আমরা দেখি। ঢাকা বিভাগে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত তিতাস গ্যাসের ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৭ হাজার কিলোমিটার। যার ৭০ শতাংশ অতি ঝুঁকিপূর্ণ। তার মধ্যে ২০ বছর থেকে শুরু করে ৫০ বছরের পুরনো বিতরণ লাইনও রয়েছে। এতে ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তিতাসের গ্যাস লাইনগুলো এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে সেগুলো যেন টাইম বোমার শামিল। যে কোনো সময় আরো ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা এতই আকস্মিকভাবে ঘটে যে, তা থেকে সাধারণত পরিত্রাণ মেলে না। আর অগ্নিদগ্ধে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকেই গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। এছাড়া অবৈধ গ্যাস সংযোগের ফলে সৃষ্ট দুর্ঘটনা রোধে সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে শিগগিরই একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করতে হবে। গ্যাস লাইন মেরামতে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে তিতাস। এরপর কী হয়েছে জানা যায়নি। ঝুঁকিপূর্ণ লাইন দ্রুত সংস্কার ও অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নগরবাসীর নিরাপদ গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিত করবে কর্তৃপক্ষ। তখনি কেবল সম্ভব গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা কমিয়ে আনা এবং নগরবাসীকে নিরাপদে রাখা।