দেশের ৮৫ শতাংশ করোনা রোগী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ১৬, ২০২০ , ২:২৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : দেশে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর ৮৫ শতাংশ ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলার। এ সমস্ত এলাকাকে দেশের রেড জোন বলা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শনিবার আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্ধিত ২০০ বেডের করোনা ইউনিট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন তথ্য জানান তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সারা দেশে যত লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তার ৮৫ শতাংশ ঢাকা সিটি বা তার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলায়। বাকি ৭টি বিভাগ বা ৫৫টি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১৫ শতাংশ। রেড জোন যদি বলি তাহলে ঢাকা সিটি ও এর আশপাশের জেলাকে রেড জোন হিসেবে দেখতে পারেন। আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট সেক্টরে আমরা কোভিড হাসপাতাল পেয়েছি। আনোয়ার খান মেডিকেলই প্রথম যেটি আমরা গ্রহণ করলাম। মাত্র ১৯ দিনে হাসপাতালটি নির্মাণ করায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আনোয়ার খানসহ প্রতিষ্ঠানটির সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিষ্ঠানটির ২০০ বেড, ২০ টি আইসিইউসহ উপকরণ রয়েছে যা কোভিড চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, প্রকৃত দেশ প্রেমিকরা বিপদের মুহূর্তে দেশের মানুষের পাশে এগিয়ে আসেন। যারা মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন তারাই দেশ প্রেমিক। সমালোচনা অনেকেই করতে পারেন, কিন্তু দেশের স্বার্থে কয়জন এগিয়ে আসেন সেটিই দেখার বিষয়। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর ওষুধ রেমডিসিভির আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকায় যে রেমডিসিভির ওষুধ তৈরি হয়েছে, আমাদের দেশেও তৈরি হচ্ছে। আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে তা হাতে পাওয়া যাবে। আমরা ভ্যাকসিন নিয়েও কাজ করছি। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পরপরই যাতে আমরা সেটা পেতে পারি সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। করোনা চিকিৎসায় দেশের সক্ষমতা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে কোভিড হাসপাতাল করা হচ্ছে। টেস্টের ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের ৪০টির উপরে ল্যাব রয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরো ১৪/১৫ টা বৃদ্ধি করা হবে। ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল তৈরি করেছি। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে দুই হাজার ডাক্তার এবং ছয় হাজার নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। যেটা কয়েক মাসেও সম্ভব হত না সেটা মাত্র ১৫ দিনে সম্পন্ন করা গেছে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। করোনা উপসর্গ না লুকানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি। তবে আমরা কষ্ট পাই যখন বাজারে মানুষের জটলা, রাস্তায় মানুষের জটলা থাকে। এগুলোতে ঝুঁকি রয়েছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমরা সকলের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমরা লক্ষ্য করছি অনেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে তথ্য লোকাচ্ছেন। দয়া করে তথ্য লুকাবেন না। এতে চিকিৎসক যেমন ঝুঁকিতে পড়বে তেমনি আপনার পরিবারও বিপদে পড়বে।
সভাপতির বক্তব্যে আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান এবং প্রাইভেট মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়োর হোসেন খান বলেন, সরকারের সাথে আমাদের যে কমিটমেন্ট ছিলো সেটি আমরা পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আমরা কোভিড হাসপাতাল নির্মাণ করেছি। আমরা মানুষের জন্য মানবতার কল্যাণে কাজ করতে চাই। আমি অন্য কিছু কখনো চাইনি। আমরা এখানে কোন চিকিৎসা সেবার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করবো না। আমাদের মূল্য হবে শুধুমাত্র সেবা।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের হাসপাতালে কোভিড, নন-কোভিড উভয় সেবা দেবো। এজন্য সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে আলাদা ভবনে ২০০ বেডের করোনা ইউনিট নির্মাণ করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে কোন রোগী যাতে ফিরে না যায় সেজন্য আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি। নন-কোভিড রোগীরা যাতে কোন ধরণের অসুবিধা না হয় সেজন্য আমাদের সকল কার্যক্রম চালু রেখেছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্ব মহামারী করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমরাও সমন্বিতভাবে করোনা মোকাবেলা করে চলেছি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও করোনা মোকাবেলায় এগিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ে এই প্রতিষ্ঠানটি করোনা ইউনিট নির্মাণ করেছে। আমি বিশ্বাস করি কোভিড চিকিৎসায় এই প্রতিষ্ঠান সফলভাবে মোকাবেলা করবো।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সচিব আলী নূর, প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে অল্প সময়ে কোভিড ইউনিটটি প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশের প্রতি প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ববোধ থেকেই এটি সম্ভব হয়েছে। আশাকরি এই হাসপাতাল করোনা চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি মোবিন খান বলেন, দেশে কোভিড চিকিৎসায় প্রতিষ্ঠানটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কোভিড রোগীরা সে সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, এই উদ্যোগের ফলে সেই সমস্যার অনেকটাই লাঘব হবে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, আরো ৫/৬ টি বেসরকারি মেডিকেল কোভিড চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সরকার যখন যেভাবে চাইবে সেভাবেই সেবা প্রদান করা হবে।
আনোয়ার মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এখলাসুর রহমান বলেন, কোভিড নিয়ে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যুগে যুগে এই ভাইরাস পৃথিবীতে আসছে। এই ভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের মনোবল বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে আমরা এটি ওভারকাম করতে পারবো।
তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের পর আমাদের হাসপাতাল আমরা এক দিনের জন্যও বন্ধ করি নাই। ইমার্জেন্সি-আউট ডোর সবকিছুই খোলা, সকল প্রকার সেবা কার্যক্রম এখানে চলমান রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় লোকবল বৃদ্ধি করা হয়েছে।