নওগাঁর মান্দা উপজেলার দুই গ্রামে হাজারো মৌচাক
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ১৪, ২০২৩ , ২:১৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
নওগাঁ প্রতিনিধি : ছাদের কার্নিশ, দেয়াল কিংবা বারান্দা—প্রায় সব জায়গায় বাসা বেঁধেছে মৌমাছির দল। বাদ যায়নি আশপাশের গাছগাছালিও। একটি-দুটি নয়, প্রতিটি বাড়িতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে এমন অনেক মৌচাক। কোনো বাড়িতে ৩০টি, আবার কোনো বাড়িতে ৫০টি। এসব মৌচাক থেকে বিনিয়োগ ছাড়াই মধু বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারছেন গ্রামবাসী। প্রাকৃতিকভাবে মৌচাক তৈরি হওয়া গ্রাম দুটির নাম পীরপালি ও ফেটগ্রাম। নওগাঁর মান্দা উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গ্রাম দুটির অবস্থান। গ্রামে বাড়ির দেয়াল, ছাদ, টিনের চালে হাজারের বেশি মৌচাক প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে। প্রায় ১০ বছর ধরে গ্রাম দুটির বাড়িতে বাড়িতে ও গাছের ডালে মৌচাক তৈরি হচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দারা এসব চাক থেকে মধু আহরণ করে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন। বাসাবাড়িতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা মৌচাক থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ গ্রাম দুটিতে ভিড় করেন। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়িতে বাড়িতে ছাদের কার্নিশ, টিনের চাল, দেয়াল, বারান্দা, গাছের ডালসহ যত্রতত্র মৌমাছির চাক। গ্রামের পাশেই বিস্তীর্ণ শর্ষেখেত। মৌমাছির ওড়াউড়ির পরও বাসিন্দারা নির্ভয়ে চলাফেরা করছেন। গ্রাম দুটির প্রায় প্রতিটি বাড়িতে অন্তত ১০টি মৌচাক আছে। এ ছাড়া গ্রামের গাছগাছালিতেও মৌচাক দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে থেকেই গ্রাম দুটিতে কমবেশি মৌচাক তৈরি হতো। তবে গত এক দশকে এর ব্যাপকতা বেড়েছে। ১০-১২ বছর ধরে গ্রামের আশপাশের মাঠে প্রায় সব জমিতেই শর্ষের আবাদ শুরু হয়। এর পর থেকে গ্রামে মৌমাছির বিচরণ বেড়ে যায়। আগে যেখানে বাসাবাড়িতে দু-একটি মৌচাক তৈরি হতো, এখন সেটি কয়েক গুণ বেড়েছে। এসব মৌচাক থেকে মধু আহরণ করে তাঁরা লাভবান হচ্ছেন। একটি মৌচাক থেকে তিন থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। মৌসুম শেষে অধিকাংশ মৌমাছি অন্যত্র চলে যায়। তবে কিছু মৌমাছি চাক করে বছরজুড়ে থাকে।
পীরপালি গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক হাফিজ উদ্দিনের দোতলা বাড়ির ছাদের কার্নিশ, দেয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায় এবার ৩০টি মৌচাক তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বারান্দার কার্নিশে বাণিজ্যিকভাবে মধু আহরণ করতে ৩০টি বাক্স বসিয়েছেন তিনি। হাফিজ উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত দেড় শ কেজি মধু আহরণ করেছেন। মাঠে শর্ষের ফুল নেই। তবে বাগানে আমের মুকুল এসেছে। এখনো ৬০ থেকে ৭০ কেজি মধু পাওয়ার আশা করছেন। প্রায় কোনো খরচ ছাড়াই ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এমন মৌচাক আছে বলে তিনি জানান। ফেটগ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের বাড়িতে প্রাকৃতিকভাবে ৪৫টি মৌচাক গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, তাঁরা আধা পাকা বাড়ির টিনের চাল, বারান্দার কার্নিশ ও দেয়ালে মৌচাক গড়ে উঠেছে। সেগুলোর প্রতিটি থেকে ৩ থেকে ৫ কেজি করে মধু সংগ্রহ করতে পারছেন। ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি মধু ৫০০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিনিয়োগ ছাড়া এ সময়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হবে তাঁর। সংসারের খরচ চালাতে এই বাড়তি আয় তাঁকে ব্যাপক সহযোগিতা করছে।
মৌমাছির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর রাজশাহী থেকে পীরপালি গ্রামে ঘুরতে এসেছেন রকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ‘টেলিভিশনে প্রতিবেদন দেখে এখানে মৌচাক দেখতে এসেছি। মৌমাছি আর মানুষের এমন বসবাস আগে কখনো দেখিনি। খুব অবাক করার মতো বিষয়। খুবই ভালো লেগেছে। আর প্রাকৃতিকভাবে আহরিত মধু সত্যি খুবই সুস্বাদু। খাঁটি মধু হওয়ায় ৩ কেজি মধু কিনে বাড়ি ফিরছি।’ তিন বছর ধরে শর্ষের মৌসুমে গ্রাম দুটি থেকে মধু সংগ্রহ করেন মৌচাক মধু কোম্পানির স্বত্বাধিকারী আবদুর রহিম। তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে এই সময়ে আমি মধু সংগ্রহ করে আসছি। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে মৌচাক আছে। কারও বাড়িতে ৩০টি, আবার কারও বাড়িতে তার বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার মৌচাক আছে গ্রাম দুটিতে। সেই মধু সংগ্রহ করে আমাদের কোম্পানি বাজারজাত করছে।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এ কে এম মনজুরে মাওলা বলেন, চলতি মৌসুমে নওগাঁয় প্রায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর বেশি। এসব শর্ষে মাঠের আশপাশের গ্রামের বাসাবাড়ি ও গাছে প্রাকৃতিকভাবে মৌচাক গড়ে ওঠে। মান্দার পীরপালি ও ফেটগ্রামে প্রাকৃতিকভাবে হওয়া মৌচাক তিনি দেখেছেন। এটি সত্যিই বিস্ময়কর। এর মাধ্যমে গ্রামবাসী লাভবান হচ্ছেন। এ ছাড়া বাণিজ্যিক মৌচাষিরাও বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করেন।