আজকের দিন তারিখ ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় পশুর চামড়ার বাজার নিয়ে নৈরাজ্য

পশুর চামড়ার বাজার নিয়ে নৈরাজ্য


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২৫, ২০২১ , ২:১৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


গত বছরের ঈদুল আজহার মতো এবারো কুরবানির পশুর চামড়ার দরে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। করোনা মহামারি, বন্যার দুর্যোগ ও আন্তর্জাতিক বাজারে দর বিপর্যয় বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে দর নির্ধারণ করে সরকার। লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সারাদেশে খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারিত ছিল। দেখা যায়, ঢাকায় গরুর চামড়া গড়ে ১৫ থেকে ২৫ টাকা বর্গফুটে বিক্রি হয়েছে। ঢাকার বাইরে ১০০ থেকে ৪০০ টাকায় প্রতিটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। এমন অবস্থা নিশ্চয় হতাশাজনক। কুরবানির পশুর চামড়ার বাজার নিয়ে এই বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য প্রতি বছরের চিত্র। এটাকে কি কোনোভাবেই শৃঙ্খলায় আনা যায় না? অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছর কুরবানির পশুর দাম বাড়লেও ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে বছরের পর বছর চামড়ার দাম কমিয়েই যাচ্ছেন। দাম কম নির্ধারণ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। কারণ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এই নির্ধারিত দরে চামড়া কিনতে পারেন না। নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি টাকায় চামড়া কিনে লোকসানে পড়েন অনেক ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের মতে, একটি গরুর চামড়ায় ৬০ থেকে ৭০ টাকার লবণ দিতে হয়। এর সঙ্গে শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন খরচ গড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা ব্যয় হয়। আড়ত ও ট্যানারিগুলোর মোট খরচ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। এসব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দর প্রথম স্তরে ঢাকায় হওয়া উচিত অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ট্যানার্স এসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, বছরে দেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এসব চামড়ার ৬০ শতাংশেরও বেশি সংগ্রহ করা হয় কেবল কুরবানির পশু থেকে। কুরবানিই এ দেশে পশু চামড়া সংগ্রহের মূল মৌসুম। কাজেই কুরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিকিকিনি কেন্দ্রিক যে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ এ সময় চলে একে সুশৃঙ্খল করা, সুপরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনা খুবই জরুরি। অথচ এ কাজটি করা হচ্ছে না। প্রতি বছরই চামড়ার দাম নির্ধারণ নিয়ে টালবাহানা করেন ব্যবসায়ীরা। বারবারই দাম নির্ধারণের বিপক্ষে থাকে তাদের অবস্থান। তবে শেষ সময়ে এসে তাড়াহুড়া করে একটা দাম ধরে দেয়া হয়। কুরবানির পর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এই নির্ধারিত দরে চামড়া কিনতে পারেন না। ফলে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি টাকায় চামড়া কিনে লোকসানে পড়েন অনেক ব্যবসায়ী। এছাড়া কুরবানির পশুর চামড়ার বিক্রিকৃত টাকা এতিমখানা ও গরিব-দুস্থদের দান করাটাই নিয়ম। কুরবানির চামড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থে এসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক খরচের একটি বড় অংশ নির্বাহ করা হয়। কিন্তু চামড়ার দাম প্রতি বছর কমতে থাকায় প্রতিষ্ঠান চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অন্যদিকে এভাবে দেশের চামড়ার বাজারে মন্দায় প্রতি বছর ভারতে বিপুলসংখ্যক চামড়া পাচার হয়ে থাকে। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের পরও তা ঠেকানো যায় না কখনো। চামড়া পাচার ঠেকাতে, সিন্ডিকেটবাজি ঠেকাতে মহল্লাভিত্তিক ক্রয়কেন্দ্র বসানো দরকার। পাশাপাশি চামড়া যাতে যথাযথ মূল্যে বিক্রি হয় সে ব্যবস্থা করা দরকার।