পাহাড়ধস ঠেকাতে আগে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২৯, ২০২১ , ১২:৫২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতের কারণে মঙ্গলবার ভোরে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনায় প্রাণনাশকে কি শুধুই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বলা যাবে? এই মৃত্যুতে কি আমাদের কোনোই দায় নেই? কক্সবাজারে বর্তমানে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বসবাস করছে। এদের অধিকাংশই পাহাড়ধসে পতিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পাহাড়ধসে প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রশাসনের কিছু সতর্কতামূলক তৎপরতা দেখা গেলেও পাহাড়ধস ঠেকানোর ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড়ধসে পড়ছে তা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়। বর্ষায় প্রাণহানি ছাড়াও পরিবেশ-প্রকৃতিতে এর ভয়ংকর বিরূপ প্রভাব নিয়ে কারো কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। বেসরকারি একটি সংস্থা জেলা উপক‚লীয় পল্লী উন্নয়ন পরিষদ জানিয়েছিল, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় আড়াই লাখ পরিবার পাহাড়ধসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয়েছে। পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা গাছপালা উজাড়ের ফলে পাহাড়ের অবশিষ্ট মাটি আলগা হয়ে যায়। যার ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢল আলগা মাটি ধুয়ে নিয়ে নিচে নামতে থাকে। পাহাড় হয়ে পড়ে দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ। ঘটে পাহাড়ধস। সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধসে ১১০ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জনসহ ১৫৬ জন মারা যায়। এরপরও কি আমরা সচেতন হয়েছি। এর প্রতিকারে কী করতে পেরেছি আমরা? প্রশাসনের তরফে দৃশ্যমান যে তৎপরতা তা বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালু এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে নেয়ার চেষ্টায় সীমাবদ্ধ। কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার কারণেই পাহাড় তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করা না গেলে পাহাড়ধসে প্রাণঘাতী বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে। শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড়ধসে পড়ছে তা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়। পাহাড় কেটে চলছে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য। এমনকি সরকারি উদ্যোগেও উন্নয়ন কর্মকাÐের নামে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। আমরা দেখি বর্ষা মৌসুমে বসতি উচ্ছেদের তৎপরতা। শুধু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালের বসতি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, পাহাড়ধস ঠেকানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ।