‘পিক সিজনে’ ডেঙ্গু
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ১৯, ২০২৩ , ৪:৩৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : দেশে ডেঙ্গু রোগের মৌসুম ধরা হয় মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ডেঙ্গু সারা বছরব্যাপী হচ্ছে। এরমধ্যে আক্রান্তের গ্রাফ সবচেয়ে ওপরের দিকে থাকে জুলাই ও অগাস্ট মাসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে যে-সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিল তার চেয়ে সাত গুণ বেশি আক্রান্ত হয়েছে জুলাইয়ে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ। বলা হচ্ছে- বছরের ‘পিক সিজন’। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বিবিসিকে বলেছেন, অগাস্ট মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে বলে তাদের অনুমান। তিনি বলেন, যত বৃষ্টিপাত হবে, গরম বেশি পড়বে, যত আর্দ্রতা বাড়বে যত বেশি অপরিকল্পিত নগরায়ন হবে, তত বেশি ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এডিসের জন্য আমরা সারা বছর একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর প্রকোপ কয়েকগুণ বেশি। এমন পরিস্থিতি সবশেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে। চার বছর আগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। বাংলাদেশে ওই বছরই রেকর্ডসংখ্যক রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। তবে দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছিল গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে, মোট ৬১ হাজার রোগীর মধ্যে ২৮১ জন মানুষের মৃত্যু হয়। এবারের পরিস্থিতি ২০১৯ সালের আক্রান্ত এবং ২০২২ সালের মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা। এ বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি এবং এ পর্যন্ত রেকর্ডসংখ্যক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ডেঙ্গুতে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত যত মানুষ রোগী মারা গেছে, তা এর আগে কোনও বছরের প্রথম ছয় মাসে হয়নি। এ বছর দেশের ৬৪টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এর আগে কেবল ২০১৯ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার তার পরীক্ষাগারে এডিস মশার ঘনত্ব, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত- এই কয়েকটি বিষয়কে কম্পিউটার সিমুলেশন মডেলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেন। অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বর্ষা দেরিতে শুরু হওয়ায় ডেঙ্গু মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মশার বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তনসহ মানুষের আচরণগত কারণে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা সংস্থা আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন জানিয়েছেন, বৃষ্টির সাথে এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। এদিকে, অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলছেন, গত বছর ঢাকায় এডিস মশার ওপর জরিপ করে দেখা গিয়েছে ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে কমিউনিটিতে মশার উপদ্রব প্রচুর বেড়েছে। বিশেষ করে বহুতল ভবনগুলোয়, পার্কিংয়ে সারাবছর পানি থাকে, এছাড়া নির্মাণাধীন ভবন এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা ওয়াসার পানি, ওয়াসার চৌবাচ্চার লিকেজ থেকে জমা পানি এমন চারটি স্থানে এডিসের লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। এক্ষেত্রে মশার বিস্তার ঠেকাতে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি বাংলাদেশে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেইসাথে সিটি কর্পোরেশনকে সারা বছর মশা নিধন অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন।