পুলিশের ঘষামাজায় ধর্ষণ মামলায় সরকারি কর্মকর্তা!
পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১২, ২০১৬ , ১:২৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
কক্সবাজার: ইংরেজি সালের নভেম্বর মাসে ৩১ তারিখ নেই। তবে কক্সবাজার সদর থানায় ‘সরকারি এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে’ ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঘটনার প্রথম তারিখ দেখানো হয় ৩১ নভেম্বর। আর ঘটনার দ্বিতীয় তারিখটি দেখানো হয় ১ ডিসেম্বর।
অথচ ওই ১ ডিসেম্বর ঘটনার ভিকটিম (বাদী) নারী ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে তার নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘষামাজা করে সব নথির তারিখ পরিবর্তন করেছেন। মামলার ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষায়ও পাওয়া যায়নি ধর্ষণের আলামত।
এরপরেও পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা মামলায় ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করায় নানা হয়রানি ও ভোগান্তিতে রয়েছেন সরকারি এক কর্মকর্তা। পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হওয়ার কারণে বিবাদী এ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ মামলার আইনজীবীদের।
আসামি পক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগ, আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন হলেই মামলার তদন্ত পুলিশ কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানস বড়ুয়া নানা কৌশলের আশ্রয় নেন।
তিনি মামলার এজাহার, প্রাথমিক তথ্য বিবরণী এবং অভিযোগ পত্রে ঘষামাজা করে তারিখ পরিবর্তন করেন। তিনি ঘটনার তারিখ ৩১ নভেম্বরের স্থলে ঘষামজা করে উল্লেখ করেন ৩০ নভেম্বর। আদালত তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ঘষামাজা করে তারিখ পরিবর্তনের কথা স্বীকার করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে আদালত এ পুলিশ কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দিয়ে মামলার চার্জ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেন।
গত ৮ জুন কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ওসমান গণির আদালতে জিআর ৯৯১/১৫ ইং এবং কক্সবাজার সদর থানার মামলা নং ১৯ এর দেয়া এক আদেশনামায় এসব তথ্য মিলেছে।
অথচ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চাকমা রয়েছেন নানা হয়রানি ও ভোগান্তিতে। তিনি এ মামলায় জেল হাজত ভোগের পাশাপাশি চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কারও হয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চাকমাকে আসামি করে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর কর্মী উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এক সেবিকা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি ও বাদী রাঙ্গামাটির সদর এলাকার বাসিন্দা। ৫ বছর আগে মোবাইল ফোনের সূত্রে দুজনের মধ্যে পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কের সূত্রে বিয়ের প্রলোভনে ভিকটিমকে কক্সবাজার শহরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্টাফ কোয়াটারের দ্বিতীয় তলায় এনে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয় ৩১ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর।
মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী অরূপ বড়ুয়া তপু জানান, পুরো মামলাটি পর্যালোচনা করলে নানা ভুল ও অসঙ্গতি দেখা যাবে। ঘটনার প্রথম তারিখ বলা হয় ৩১ নভেম্বর। কিন্তু ইংরেজি সালের নভেম্বর মাস ৩১ তারিখ হয় না। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মানস বড়ুয়া তা ঘষামাজা করে ৩০ নভেম্বর পরিবর্তন করেন। আদালতে এরূপ ঘষামাজা কিন্তু ফৌজদারী কার্যবিধি মতে অপরাধ। আদালতে পুলিশের এ কর্মকর্তা ঘষামাজার কথা স্বীকারও করেন।
তিনি আরো জানান, ঘটনার অপর তারিখ দেখানো হয় ১ ডিসেম্বর। অথচ মামলার বাদীর চাকরি সংক্রান্ত এক পত্রে ওই দিন সকালে তিনি উখিয়ায় অবস্থান করেছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। একই সঙ্গে বাদীর সাথে আসামির মোবাইল ফোনের সূত্রে সম্পর্কের কথা এজাহারে উল্লেখ করা হলেও আদালতে দাখিল করা অভিযোগ পত্রে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের কললিস্ট উপস্থাপন করেননি তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ডাক্তারি প্রতিবেদন। ডাক্তারি প্রতিবেদনেও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ্য রয়েছে পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।
এদিকে মামলাটি আগামী ২৬ জুলাই চার্জ শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
অভিযুক্ত কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চাকমা জানান, জেল হাজতে থাকার পর তিনি এখন জামিনে রয়েছেন। বাদী ও আসামির বাড়ি একই এলাকার হওয়ায় একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে তাকে মামলায় ফাঁসিয়েছেন। তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা জিআর ৪১১/১৬ ইং মামলার কাগজ পত্রেও একই রূপে ঘষামাজা করেছেন কক্সবাজার সদর থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মানস বড়ুয়া। এর জন্য আদালত আবারো তাকে তলব করেছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মানস বড়ুয়া মামলায় বাদী কর্তৃক প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয়ে আমি কথা বলবো না। মামলার চার্জ গঠন হয়েছে। শুনানির দিন ধার্য্য হলে আদালত যা জানতে চাইবেন তার উত্তর আমি সেখানেই দেব।’