প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ চলছে, বিরতি দরকার : সাবের হোসেন চৌধুরী
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৮, ২০২৩ , ২:৫৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
দিনের শেষে প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী সমিটির সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, আমরা যারা পরিবেশ নিয়ে কথা বলি- সবাই একটি কথা সবার আগে বলে থাকেন, প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধে আছি। এই যুদ্ধের বিরতি দরকার। কেননা- সবার মঙ্গলের জন্যই টেকসই পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য সরকারের বেশকিছু পরিকল্পনা, প্রকল্প ও ফান্ড রয়েছে। তরুণ সমাজকে নতুন নতুন আইডিয়া তৈরি করে সরকারের সহায়তা নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। সোমবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘ক্লাইমেট জাস্টিস আইডিয়া কম্পিটিশন-২০২৩’-এর ফাইনাল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডেইলি স্টার ও একশনএইড বাংলাদেশ যৌথভাবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। এবারের প্রতিযোগিতার মূল প্রতিপাদ্য রাখা হয় ‘আওয়ার প্লান্ট আওয়ার রেসপন্সিব্লিটি’। ফাইনালে ৩ ক্যাটাগরিতে নয়টি দল অংশ নেয়। পরে প্রতি ক্যাটাগড়ি থেকে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। প্রধান অতিথি বিজয়ী ও পরাজীত দলগুলোকে পুরস্কার তুলে দেন। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রকৃতি কিভাবে তার আচরণ পরিবর্তন করেছে, সেটি সবচেয়ে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে করোনা মহামারী। কেউ ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে, তার কাছে থেকে সেবা-যত্ন করে সুস্থ করে তোলা হয়, এমনটাই আমরা জেনে আসছিলাম। কিন্তু করোনা দেখিয়ে দিয়েছে, অসুস্থ হলে কাছে যাওয়া যাবে না। প্রকৃতির সঙ্গে যদি যুদ্ধ না থামে, ভবিষ্যতে আরো অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে আমাদের। এজন্য এর মধ্যেই সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। মুজিব প্রোস্পারিটি প্ল্যান আমাদের রয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। যেখানে ১০০ কোটি টাকাও রয়েছে। তরুণরা নতুন নতুন আইডিয়া বানিয়ে এই ফান্ডের টাকা কাজে লাগাতে পারবে। দুই বছর আগের বাজেটে ইনোভেটিভ (উদ্ভাবনমূলক) ফান্ড রাখা হয়েছে। অর্থ্যাৎ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। এখন দরকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন নতুন আইডিয়া বের করা। তরুণরা যদি জলবায়ু সম্পর্কিত কোনো বিষয়ের ওপর গবেষণাও করতে চায়, সেটিও পজিটিভভাবে দেখবো। ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বন উজাড় হওয়া। বাংলাদেশে এই হার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। সারা বিশ্বে বন উড়ার হওয়ার হার শতকরা ১.৬ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে এই হার ২ শতাংশ। যদিও অনেক সংগঠন বলে থাকে বাংলাদেশে বন উজাড় হওয়ার হার ২.৪-২.৬ শতাংশ। এই জায়গায় কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে দেশে যারা পরিবেশ দূষণ করছে, তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাওয়া উচিত। সমস্যা হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ চাইতে গেলে বিভিন্ন তদবীর আসে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, দূষণ কমাতে আমার নির্বাচনী এলাকায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ দাসেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করা হয়েছে। যেটি সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব একটি প্রকল্প। ভবিষ্যতে সরকার এ ধরনের পরিবেশ বান্ধব আরো বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিতে চাচ্ছে। ডিজেলের ব্যবহার কমিয়ে আনতে কাজ চলছে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত ১০ লাখ সেচ পাম্প সচল রয়েছে দেশে। সেচ যদি সৌর শক্তির আওতায় আনা যেত, তাহলে ডিজেলের ব্যবহার অনেকটাই কমে যেত। সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। একটা সময় কার্বন নিঃস্বরণ যাতে পরিবেশের সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায় সে জন্য সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিক। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যে আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে, সেটি যেন প্রকৃতির জন্য মঙ্গলজনক হয়। কারণ একবার যদি ভুল প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, তাহলে এর খেসারত দিতে হবে অনেক। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ২০ বছর ধরে নদী বাঁচাও আন্দোলন করছি। দৃঃখের বিষয় নদী দূষণ রোধের কোনো প্রতিফলন দেখছি না। শুধু নদী দূষণ নয়, সামগ্রিকভাবে রক্ষায় আমাদের সৃজনশীল আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বসবাসের জন্য পৃথিবী একটাই। আর এর প্রকৃতি দিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে। একশনএইড বাংলাদেশের ফারাহ কবির বলেন, পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ দিন দিন বড় আকার ধারণ করছে। এটি থেকে রক্ষা পেতে শুধু আইডিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, সরকারের আরো বিনিয়োগ করতে হবে।