আজকের দিন তারিখ ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় প্রাথমিকে প্যানেলভুক্তদের নিয়োগ নিয়ে ধূম্রজাল

প্রাথমিকে প্যানেলভুক্তদের নিয়োগ নিয়ে ধূম্রজাল


পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৮, ২০১৬ , ৬:৩০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়


Panelকাগজ অনলাইন প্রতিবেদক: সাবেক রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
সাড়ে ২৮ হাজারের মতো প্যানেলভুক্ত প্রার্থীর সবাই নিয়োগ পাবেন কি না, প্যানেলভুক্তরা শুধু সদ্য জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষকের পর নতুন সৃষ্ট পঞ্চম পদটিকে শূন্যপদ বিবেচনা করে প্যানেলভুক্তদের নিয়োগ দেওয়া হবে কি না কিংবা কতজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে―এ সব বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
সচিবালয়ে বুধবার (৮ জুন) নিজ দফতরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান  বলেন, ‘মনে করেছিলাম (প্যানেলভুক্ত) যত জন আছেন সবাইকে নিয়োগ দেব। আমাদের উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার। কোর্টের রায়ের চূড়ান্ত কাগজপত্র নিয়ে দেখছি তাতে বলা হচ্ছে, শুধু সদ্য জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। এ জন্য আমরা কাগজ (কোর্টের রায়) ভালোভাবে দেখছি। ওই সব বিদ্যালয়ের শূন্য পদে যে ক’জন নিয়োগ দেওয়া যায় আমরা সে ক’জনকেই নিয়োগ দেব। আমাদের তো করার কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘আদালত বলেছেন, যারা মামলা করেছেন প্রত্যেককে নিয়োগ দিতে। ৭০০ রিটে ১০ হাজার জন জিতেছেন। এর আগে রিট করেছিলেন ১০ জন, এইতো ১০ হাজার ১০ জন। আমরা তো চাচ্ছিলাম সবাইকে নিয়োগ দেব।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘শুধু যদি সদ্য জাতীতকরণ করা বিদ্যালয়ে নিয়োগ দিতে হয় তবে কতটি পদ ফাঁকা আছে। কেউ বলছেন, আমরা নাকি ওই ফাঁকা জায়গায় অন্য স্কুলের শিক্ষক আনছি, কয়জন আনছি- ২০ জন, ৫০ জন, ১০০ জন। এদের আমরা আগের জায়গায় সরিয়ে দেব। এ পদেও আমরা তাদের (প্যানেলভুক্তদের) নিয়োগ দেব। সব জায়গায় এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
কতটি পদ ফাঁকা আছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা আমি জানি না। কোর্টের অর্ডারটা পালন করার জন্য আমরা পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত। যারা মামলা করেছেন কোর্ট তাদের নিয়োগ দিতে বলেছেন।’
প্যানেলভুক্তদের নিয়োগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সৃষ্ট পঞ্চম পদ বিবেচনায় নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন বলতে পারছি না।’
প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের ঐক্যজোটের একজন নেতা জানান, সারা দেশে প্যানেলভুক্ত শিক্ষকের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজারের মতো। জাতীয়করণ করা ২৬ হাজার বিদ্যালয়ে শূন্য পদের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি হবে না বলেও জানান তিনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কতটি পদ শূন্য রয়েছে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে হিসাব চাওয়া হয়েছে।’
প্যানেলভুক্ত সব প্রার্থীকে নিয়োগ না দেওয়া হলে ঐক্যজোট আবার আন্দোলনে যাবে বলেও জানান প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের একজন নেতা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে গত ৬ জুন জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ের শূন্য পদে প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের মেধাক্রম অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেন, ‘উপজেলা বা থানায় জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ের শূন্য পদে প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে। মেধার ভিত্তিতে শূন্যপদে নিয়োগ হলেও প্যানেলভুক্ত সবাই নিয়োগ পাবেন না।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন সৃষ্ট পঞ্চম পদে আপাতত প্যানেলভুক্তদের নিয়োগ করা হচ্ছে না বলেও জানান মহাপরিচালক।
সাবেক বেসরকারি রেজিস্টার্ড (ইতিমধ্যে জাতীয়করণ) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। ১০ লাখেরও বেশি প্রার্থী আবেদন করেন এবং চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন ৪২ হাজার ৬১১ জন। এর মধ্যে ১৪ হাজার জনকে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং বাকিদের নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের শুরুতে এ রেজিস্টার্ড বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করা হলে এরপর আর কেউ নিয়োগ পাননি।
আশ্বাসের পর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও নিয়োগ না দেওয়ায় প্যানেলভুক্ত মো. শফিকুল ইসলাম জুয়েলসহ নওগাঁর ১০ প্রার্থী ইউনিয়নভিত্তিক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৮ জুন তাদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়ে ইউনিয়নভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্যরা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। এই লিভ টু আপিল গত বছরের ৭ মে খারিজ হয়। রাষ্ট্রপক্ষ তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে। শুনানি শেষে গত ১১ ফেব্রুয়ারি তা খারিজ হয়। এ ছাড়া প্যানেলভুক্ত অন্যান্য প্রার্থীরাও রিট করেন ও রায় তাদের পক্ষে যায়।