প্রিয় স্যার : হৃদয়ের জাগরণ আপনাকে ছুঁয়ে থাকবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ১৬, ২০২০ , ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
অন্য ভুবনে বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বিকালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরাও গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। ড. আনিসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসে সংক্রমণসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। মহাখালীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে ২৭ এপ্রিল থেকে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৯ মে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। তিনি হার্ট, কিডনিসহ বেশ কিছু রোগে ভুগছিলেন। ড. আনিসুজ্জামান শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন। তার জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রয়ারি। তিনি ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯) ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শেষ করে তিনি অবসর জীবনযাপন করছিলেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি ২০১২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সভাপতি ছিলেন। এই ভূ-খন্ডে ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদবিরোধী নানা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত গণআদালতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
উপমহাদেশে সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি একটি জাতি নির্মাণে অংশ নিয়েছেন। এমন বর্ণাঢ্য জীবনের দেখা মেলে না সচরাচর। সব কাজের মধ্য দিয়ে তিনি শেকড়ের সন্ধান করেছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। শিক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৫ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভ‚ষিত করা হয়। শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে ভারত সরকার তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভ‚ষণ পদক প্রদান করে। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে। আমাদের সমাজ ও সমকাল উভয়ের জন্যই আনিসুজ্জামানকে বড়বেশি প্রয়োজন। যে মানুষ তার জীবনব্যাপী সাধনায় এই দেশ ও জাতির জন্য অনন্য অবদান রেখে আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছেন, সেই অর্জনকে স্থায়ী করে রাখার দায়িত্ব তো তরুণ প্রজন্মেরই। না হলে ক্ষতি হবে তাদেরই, যারা ঐতিহ্যের বিনির্মাণে ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারে না। আনিসুজ্জামানের জীবনকে এজন্যই গভীর যত্ন ও মনোযোগসহকারে পাঠ করা প্রয়োজন। আনিসুজ্জামান সময়ের শুভ ও কল্যাণের জায়গাকে ধারণ করেছেন। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের বিকাশকে গতি দিয়েছেন। গণসচেতনতাকে শ্রদ্ধা করেছেন। জ্ঞানের চর্চায় শিক্ষার ক্ষেত্রকে আলোকিত করেছেন। আমাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, হৃদয়ের জাগরণ আপনাকে ছুঁয়ে থাকবে। আপনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।