আজকের দিন তারিখ ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় বজ্রপাতে প্রাণহানি: সচেতনতাই হতাহতের ঘটনা এড়ানো যায়

বজ্রপাতে প্রাণহানি: সচেতনতাই হতাহতের ঘটনা এড়ানো যায়


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২২, ২০২১ , ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলেছে। কয়েক বছরে প্রাণহানি বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। গত ১৮ মে একদিনেই সারাদেশে বজ্রপাতে মারা গেছেন ১৯ জন। তারা প্রায় সবাই মাছ ধরছিলেন অথবা জমিতে কৃষিকাজ করছিলেন। গত বৃহস্পতিবার জামালপুর ও সিলেটে ৭ জন মারা গেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির দায় সর্বাধিক। তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের আশঙ্কা ১০ শতাংশ বাড়ে। বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তাপমাত্রা স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি থাকে। এ কারণে এ সময়ে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহতের এই হার ভয়াবহ। বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর সংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, দুর্যোগ ফোরামসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হিসাব অনুসারে ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে ১ হাজারের কিছু বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও ২০১০ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ১০ বছরে এতে ২ হাজার ৭৭৪ জন নিহত হয়েছে। অস্বাভাবিক খরা, বন্যা, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বজ্রপাত বৃদ্ধির জন্যও ভূমণ্ডলের উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রবণতাকে দায়ী করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলেই বজ্রপাত ও এতে মৃত্যুর হার বেশি। গ্রামে-গঞ্জে আজকাল তাল, নারিকেল, সুপারি, বট প্রভৃতির মতো বড় বড় গাছের অভাব, বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা না থাকা, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণেও বজ্রপাতের হার বাড়ছে। আবার আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছপালা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে দেশে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বর্ষা আসার আগে মে মাসে তাপমাত্রা বেশি হারে বাড়ছে। এতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। অতঃপর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রমেঘ, বজ্রঝড় ও বজ্রপাতের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বজ্রপাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা পরিসংখ্যান বা পত্রিকায় প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বলেই ধরে নেয়া যায়। আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশই ঘটে বাংলাদেশে। এখানে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাত সবচেয়ে বেশি হয়। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় গড়ে প্রায় ৪০টি বজ্রপাত হয়ে থাকে। বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতন হলে এ দুর্যোগ থেকে অনেকাংশেই রক্ষা পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে গবেষণা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। বিশেষ করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জনসাধারণকে সচেতন ও সজাগ করে তোলা প্রয়োজন, যাতে বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা এড়ানো যায়। বজ্রপাত নিয়ে গবেষণার বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকেও গুরুত্ব দেয়া দরকার।