বন্ড কেলেঙ্কারি: ৫৩ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে খুলনার ৪ প্রতিষ্ঠান
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০ , ১২:১৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
খুলনা ব্যুরো ও মোংলা প্রতিনিধি : খুলনা অঞ্চলের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী লকপুর গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বন্ড কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ৫৩ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শুল্ক আইনে ৪টি মামলা দায়েরের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স সাসপেন্ড ও বীন নিবন্ধন লক করা হয়েছে। একই সঙ্গে লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, এ মর্মে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বন্ড সুবিধায় আনা ৪৫০ কোটি টাকার মালামাল গুদাম থেকে সরিয়ে বড় অঙ্কের এই শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সের বদৌলতে পণ্য তৈরির জন্য যেসব কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে সেগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। তবে শর্ত থাকে যে, এসব কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত পণ্য শুধু বিদেশেই রফতানি করা যাবে। দেশের বাজারে বিক্রির জন্য বন্ড সুবিধা প্রযোজ্য নয়। এটা করলে চোরাচালানি হিসেবে গণ্য হবে। আর এই শর্ত ভঙ্গ করেছে লকপুর গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠান। তারা বন্ড সুবিধায় আনা প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার ট্যাক্স ফ্রি মালামাল কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।
মোংলা কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, খুলনা শহর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লকপুর গ্রুপের এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স আলফা এক্সেসরিজ অ্যান্ড অ্যাগ্রো এক্সপোর্ট লিমিটেড’ ও এর পাশে ‘বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টারন্যাশনাল’ এর বন্ড গুদামে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৭ আগস্ট মোংলা কাস্টমস ও রাজস্ব কর্মকর্তারা যৌথ অভিযান চালান। এ সময় বন্ড সুবিধার আওতায় আনা মালামাল গায়েব করার ঘটনা ধরা পড়ে। কাস্টমস সূত্রে বলা হয়েছে, এ দুটি প্রতিষ্ঠান মালামাল গায়েব করে যথাক্রমে ২৪ কোটি ৫২ লাখ এবং ১৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। এর চারদিন পর ১ সেপ্টেম্বর মোংলা ইপিজেডে অবস্থিত লকপুর গ্রুপের আরও দুটি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন পলিমার ও মুন স্টার পলিমারে অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠান দুটি বন্ধ থাকায় তাদের আমদানি তথ্য ও ইনবন্ড রেজিস্ট্রার দেখে যে পরিমাণ মালামালের ঘাটতি দেখতে পাওয়া যায় তাতে যথাক্রমে ৮ কোটি ৬০ লাখ ও ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে।
মোংলা কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা (প্রশাসন) আবদুর রহিম জানান, চারটি প্রতিষ্ঠানের গুদামে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা মালামালের মধ্য থেকে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার পিপি-এলডিপিই, বিওপিপি, ডুপ্লেক্স বোর্ড, ভিপিভি ফিল্ম, আর্ট কার্ড, ক্রাফট লাইনার পেপার, পেস্টিং গাম প্রভৃতি মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যার সরকারি শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫৩ কোটি টাকা।
মোংলা কাস্টমস কমিশনার হোসেন আহমেদ জানান, বন্ড সুবিধার আওতায় আনা মালামাল সরিয়ে ফেলা কালোবাজারে বিক্রির শামিল। এ ব্যাপারে শুল্ক আইনে চারটি মামলা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪টি বন্ড লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে। বীন নিবন্ধন লক করা হয়েছে। পাশাপাশি মেসার্স আলফা এক্সেসরিজ অ্যান্ড অ্যাগ্রো এক্সপোর্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টারন্যাশনালের বন্ড লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, এ মর্মে শোকজ করা হয়েছে।
বন্ড সুবিধায় আনা মালামাল কালোবাজারে বিক্রির বিষয়ে লকপুর গ্রুপের মোংলা ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন পলিমার ও মুন স্টার পলিমারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আজগর আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি গ্রুপের ডিএমডি খান হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এরপর হাবিবুর রহমানের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি পরে ফোন করতে বলেন। পরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।