বহুরূপী শাহেদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি নিয়ে বিব্রত প্রভাবশালীরা
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৯, ২০২০ , ৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
এসএসসি পাস শাহেদ করিম রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক। শুধু হাসপাতালই নয়; এমএলএম কোম্পানি, পত্রিকাসহ আরও কত কিছুর মালিক এই শাহেদ! উপার্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা। বিশিষ্ট অনেক ব্যক্তির সাথেই তার ছিল দহরমমহরম। প্রতারণায় তিনি এ সম্পর্ককেই ব্যবহার করে আসছিলেন।জানা গেছে, ২০১১ সালে ধানমন্ডিতে এমএলএম ব্যবসা করে গ্রাহকদের ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তখন লোকে তাকে চিনতো মেজর ইফতেখার করিম নামে। কখনো মেজর, কখনো সচিব. ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর এপিএস হিসেবেও নিজের পরিচয় দিয়েছেন।
মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ থেকে ৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার নথিতে নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল হিসেবে জাহির করেন। এ বিষয়ে আদালতে দুটি মামলা চলছে এখনো।
শাহেদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় দুটি, বরিশালে একটি, উত্তরা থানায় ৮টি মামলাসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে প্রতারণার মামলায় তাকে একবার গ্রেফতারও করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শাহেদসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
প্রশাসন জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল। বেরিয়ে এসেছে কী পরিমাণ অনিয়ম এখানে হয়েছে।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান চলছে। সোমবার (৬ জুলাই) রাজধানীর উত্তরা এবং মিরপুরে শাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব। উঠে আসে অনিয়ম ও প্রতারণার নানা চিত্র।
র্যাব সূত্র জানায়, করোনাকালে ১০ হাজার রোগীর করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ করে রিজেন্ট হাসপাতাল। মাত্র চার হাজার ২৬৪টি নমুনা সরকারিভাবে টেস্ট করে রিপোর্ট দেয়। বাকি পাঁচ হাজার ৭৩৬টি পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেয়া হয়। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তি অনুযায়ী, বিানামূল্যে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসা দেয়ার কথা ছিল; কিন্তু ১০ হাজার টেস্টের বিপরীতে রিজেন্ট প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া ভর্তি রোগীপ্রতি এক লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ বিল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার শুধু জুন মাসেই সরকারের কাছে চিকিৎসা বিল বাবদ পাঠানো হয় এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার হিসাব। সেবার নামে এভাবেই অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করেছে রিজেন্ট। আর যখনই এসব নিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো তদন্ত শুরু করে, তখন নিজেকে বাঁচাতে সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালের তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের একটি নাটক করেন।
এদিকে শাহেদের এ প্রতারণার চিত্র জনসমক্ষে এলে বিব্রত অবস্থায় পড়েন প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডি-এক্টিভ করার আগেই শাহেদের ওয়াল থেকে অনেকেই ওই সব ছবি নিয়ে ভাইরাল করেন। অনেককেই দেখা গেছে, শাহেদের সঙ্গে বেশ অন্তরঙ্গ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতারণার কাজে শাহেদ এ ছবিগুলো ব্যবহার করতেন। এমনকি অনেক মানুষকে নানা সময় অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দিয়েছেন-এমন অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, কয়েক বছর ধরে নানা পরিচয়ে অপকর্ম করে আসছিলেন শাহেদ করিম। সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় তার বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে সতর্কতাও জারি করা হয়েছিল। বিভিন্ন ভিডিও এবং স্থির চিত্রে দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্ত শাহেদ করিম ঢাকার বাইরে গেলেই প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ স্কট ব্যবহার করেছিলেন। তার অফিস কক্ষের টর্চার সেলে নির্যাতনের স্থির চিত্র’ও প্রকাশ হচ্ছে এখন।
আরিফুর রহমান সোহাগ নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, তার গাড়ি কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে মেয়ে কেলেঙ্কারি সবকিছুই আমি জানতাম। যার কারণে সে কখনওই আমাকে ছাড়তে চায় না। এছাড়াও আমাকে বলছে, আমি যদি কোথাও মুখ খুলি তাহলে আমাকে জানে মেরে ফেলবে। করোনার নমুনা পরীক্ষা না করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর শাহেদ করিমের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা করে দেয় র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত।