বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২, ২০২০ , ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
দিনের শেষে প্রতিবেদক : সকাল নয়টা। রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড। গাড়ির জন্য মানুষের লম্বা লাইন। একটি একটি করে গাড়ি আসছে। যাত্রীরা একে একে গাড়িতে উঠছেন। শ্রাবন পরিবহন, তারাব পরিবহনের এসব মিনিবাসে প্রতি সিটে একজন করে যাত্রী বসছেন। যাত্রী পূর্ণ হলে গাড়ির দরজা লক হয়ে যাচ্ছে। গুলিস্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে গাড়ি। হ্যান্ড মাইকে এক পরিবহন শ্রমিক ঘোষণা করছেন, অতিরিক্ত যাত্রী উঠলে নামিয়ে দিন। এখানে দুজন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে তদারকি করতে। আগে রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। রায়েরবাগ থেকে সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চললেও পেছনের স্টপেজগুলো থেকে দুয়েকটি গাড়ি দেখা গেছে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে যেতে। বিশেষ করে লেগুনাগুলোতে ঝুলে যেতে দেখা গেছে যাত্রীদের। সত্যিই এ দৃশ্য চমকে উঠার মতে। এক শ্রেণীর পরিবহন মালিক ও শ্রমিক অসহায় মানুষকে কারসাজির বেড়াজালে আটকে ফেলেছেন। এরা সাধারণ যাত্রীকে শুধু জিম্মি নয়, রক্ত চুষে নিচ্ছে। সড়কে গাড়ি নামার প্রথম দিন সোমবারই দেখা গেছে অরাজকতা। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন তোয়াক্কাই করেনি কিছু কিছু মিনিবাস, লেগুনা। ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া নিলেও কিছু বাসের চিত্র ছিল আগের মতোই। কোন কোন বাসে মানুষ ঝুলে গন্তব্যে গেছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাস ও লেগুনায় ঝুলে যাওয়ার চিত্র ভেসে বেড়াচ্ছে। যেন কেউ দেখার নেই। কেউ কিছু করার নেই। বাসের হেলপার, কন্ডাক্টরের বক্তব্য মানুষ জোড় করে উঠলে আমরা কি করব? আর সাধারণ যাত্রীর কথা- সময়মতো অফিস ধরতে গিয়েই আমরা বাধ্য হচ্ছি গাদাগাদি করে বাসে উঠতে। রাস্তায় গাড়ি কম। এজন্যই এ অবস্থা। যেসব শর্তে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তার কোনটিই মানা হচ্ছেনা। অথচ বাড়া দিতে হচ্ছে ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে। লকডাউনে দীর্ঘ দুই মাস যান চলাচল বন্ধ থাকার পর খোলার দিনই ভাড়া দিতে হয়েছে ৬০ শতাংশ বেশি। এমনিতেই দুই মাসেরও অধিক সময় অনেকেই ছিলেন কর্মহীন। উপার্জন ছিল একেবারে বন্ধ। ভীষন কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়েছে। হাত একেবারেই শূন্য। এর উপর বাস ভাড়া বাড়ানোর খড়গ মাথার উপর। ঝুঁকি তো রয়েছেই। প্রতি সিটে একজন করে বসানোর কথা। সেখানে দুইজন করে বসছে। দাড়িয়ে যাত্রী উঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে বাসের গেইটে যাত্রী না ঝুলা পর্যন্ত গাড়ি ছাড়ছেনা এমন খবরও ছিল প্রথম দিন। খবর নিয়ে জানা গেছে দূর পাল্লার বাসগুলো কর্তৃপক্ষের দেয়া শর্ত মেনে চলাচল করছে। স্বাস্থ্যবিধিও মানছে তারা। কিন্তু টাউন সার্ভিস বাসগুলোর কিছু কিছু যত সমস্যার মূলে। তাদের উপর নজরদারী করার কেউ নেই। কোন যাত্রী প্রতিবাদ করলেও তার উপর তেড়ে আসে কন্ডাক্টর, হেলপার। ড্রাইভারকে কিছু বললেও তিনি উল্টো বলেন, না পোষালে নেমে যান। একটি বাসের সকল যাত্রী জিম্মি হেলপার, কন্ডাক্টর ও ড্রাইভারের কাছে। কেউ কেউ বলছেন, শর্ত না মেনে গাড়ি চালালে ভাড়া নেয়া হউক আগের মতো। তাদের এ বক্তব্যও মিইয়ে যায় কন্ডাক্টরের উচু গলার কাছে। একই সঙ্গে এই উচু গলার কাছে হার মানছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী বহন করার বিষয়টিও। টাউন সার্ভিস কিছু লোকাল বাসের ভয়াবহ চিত্র ভয়ঙ্কর দিককেই সামনে আনছে। এমনিতেই কদিন ধরে করোনা সংক্রমণ বাড়তির দিকে। মৃত্যুর হারও আতঙ্কিত করে তুলছে মানুষকে। এ অবস্থায় গাদাগদি করে যাত্রীবহন কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখনই সংশ্লিষ্ট সকলকে বিষয়টি নিয়ে না ভাবলে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। রায়েরবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে সুশৃঙ্খলভাবে বাস ছেড়ে যাওয়ার এমন দৃশ্য যদি রাজধানীর সকল স্টপেজে দেখা যেত তাহলে এত হইচই হতোনা। প্রশাসন ও পরিবহন মালিকদের এক্ষেত্রে আরও কঠোর হতে হবে। তবেই সরকার এক্ষেত্রে সফল হবে। যাত্রীরা বশি ভাড়া দিয়েও স্বস্তিতে চলাচল করতে পারবে।