বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ : প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হোক
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ৬, ২০২০ , ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১০০ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত ৪ হাজারেরও বেশি। নিহতের মধ্যে ৩ বাংলাদেশিও রয়েছেন। আহত হয়েছেন নৌবাহিনীর ২১ সদস্য। এ ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। তবে ঠিক কী কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা পরিষ্কার নয়। কয়েক দিন ধরে ইসরায়েল-লেবানন-সিরিয়া সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। এর সূত্র ধরে বিস্ফোরণের ঘটনা হতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব উঠেছে, এটি ইসরায়েল কিংবা আমেরিকার পারমাণবিক হামলা হতে পারে। বিবিসি বলছে, বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে ইসরায়েল আর আমেরিকাকে দুষছে সেখানকার পার্টিজান বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। তবে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলছেন, এটি নাশকতামূলক ঘটনা নয়। জানা গেছে, ছয় বছর ধরে একটি গুদামে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত করে রাখা হয়েছিল। ২০১৪ সালে একটি মালবাহী জাহাজে করে ওই রাসায়নিক এসেছিল। কাগজপত্র ঠিক না থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজের জিনিস বাজেয়াপ্ত করে। তারপরই ওই রাসায়নিক গুদামে মজুত করা হয়। ঠিক ছিল পরে নিলামের মাধ্যমে রাসায়নিক বাজারে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু গত ছয় বছরে সে কাজ করা যায়নি। শুধু তাই নয়, এই পরিমাণ রাসায়নিক যেখানে মজুত ছিল, সেখানে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জমিতে সারের কাজে লাগে। খনিতে কাজে লাগে। আবার বোমা তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। সহজেই এর থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার সে ঘটনাই ঘটে বৈরুতে। বিস্ফোরণে প্রায় গোটা রাজধানী কেঁপে ওঠে। বহু দূর পর্যন্ত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষ আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবারেও বহু বাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে আহতদের উদ্ধারের কাজ চলছে। কার্যত ধসে গিয়েছে গোটা শহর। বিবিসি বাংলা বলছে, কয়েকশ কিলোমিটার দূরের সাইপ্রাসেও বিস্ফোরণের আঁচ পাওয়া গেছে। এতে বুঝা যায় বিস্ফোরণের ভয়াবহতা কত প্রকট ছিল। এ ঘটনা লেবাননের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিপর্যস্ত লেবানন এমনিতেই পুরনো গোষ্ঠীদ্ব›দ্ব ও নতুন করোনা ভাইরাসের সংকট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক মুখোমুখি অবস্থানের কারণেও দেশটি নাজুক অবস্থানে আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আশঙ্কা, এটি সন্ত্রাসী হামলা। ইসরায়েল-লেবানন-সিরিয়া সীমান্তে উত্তেজনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে প্রাথমিকভাবে অনেকেই মনে করেছিলেন, বৈরুতের বিস্ফোরণের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের বিষয়টি জড়িত। ঘটনার পরই ইসরায়েল বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়, এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই তারা জড়িত নয়। অভিযোগগুলো তদন্তসাপেক্ষ বিষয়। আমরা চাই এ ঘটনার প্রকৃত তথ্য উন্মোচন হোক। যদি সন্ত্রাসী হামলা না হয় যাদের গাফিলতিতে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে, তাদের সবাইকে কঠোরতম শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নিহত প্রবাসীদের ক্ষতিপূরণের দাবি তুলতে হবে। যারা আহত হয়েছেন তারা যেন সুচিকিৎসা পান সেই বিষয়ে নজরদারি করতে হবে। লেবাননে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করেন। এ ঘটনায় যেসব বাঙালি নাবিক আহত হয়েছেন এই মুহূর্তে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি।