ব্যতিক্রমী এক শহীদ মিনার, নজর কেড়েছে সবার
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ২:২৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
যশোর প্রতিনিধি : যশোরের তালবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারটি ব্যতিক্রম। শহীদ মিনার বললেই চোখের সামনে যে ছবি ভেসে ওঠে, এটি তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে সবার নজর কেড়েছে এই শহীদ মিনার। কলেজের একাডেমিক ভবনের সামনে চার ধাপ সিঁড়িযুক্ত তিন ফুট বেদির ওপরে যথাক্রমে ১১ ফুট ও ১৫ ফুট উচ্চতার দুটি আয়তাকার মিনার রয়েছে। যার একটি ইটের রঙে অপরটি সাদা। এটি তালবাড়ীয়া এলাকার আঞ্চলিক শহীদ মিনার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, যশোর শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নে ছায়া ঢাকা ও পাখি ডাকা শান্ত গ্রাম তালবাড়ীয়া। গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে এই আট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা এই শহীদ মিনারের বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে আসছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের আর্কিটেক্ট ফার্ম জে এ আর্কিটেক্টস লিমিটেড এই শহীদ মিনারের নকশাটি করেছে। স্থপতি রেজাউল কবির এই শহীদ মিনারের নকশাবিদ। নকশা স্মারকে নিজ হাতে রেজাউল কবির লিখে দিয়েছিলেন, অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রাণপ্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এই দুটি আন্দোলনে সমগ্র বাঙালির প্রাণ একাত্ম হয়ে অংশ নিয়েছিল। একদিকে যেমন, বাঙালির বাংলা ভাষার অধিকার অর্জন, অন্যদিকে সার্বভৌমত্বের মধ্যে রয়েছে মুক্তির আনন্দ। ভাষার মুক্তি ও দেশের মুক্তি মিলে হয়েছে বাঙালি জাতির উদয়। এই দুটি চেতনা জাগ্রত থাকুক বাঙালির প্রাণে। দুটি স্তম্ভে থাকুক শত শহীদের প্রতি বাঙালির শ্রদ্ধা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভাষাসৈনিক সাতক্ষীরার কলারোয়া এলাকার বাসিন্দা শেখ আমানুল্লাহ এই শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ১৯৯৪ সালে তালবাড়ীয়া কলেজটি স্থাপিত হয়। প্রথমদিকে কাঁচাঘর এবং পাশের একটি প্রাইমারি স্কুলে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। এলাকার কিছু বিদ্যোৎসাহী মানুষ কলেজটি নির্মাণে এগিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মো. তবিবুর রহমান, খলিলুর রহমান, গোলাম মোস্তফা ও এনামুল হক। এর মধ্যে এনামুল হক হলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার বাবা। তিনি এখানে একটি হোস্টেল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। সে লক্ষ্যে ২৫ ট্রাক ইট দিয়েছিলেন। কিন্তু মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করায় হোস্টেলটি আর নির্মাণ করা হয়নি। কলেজের তৎকালীন সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা চেয়েছিলাম একটি ব্যতিক্রমী শহীদ মিনার। বিষয়টি স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সাহেবকে অবহিত করি। তার আর্কিটেক্ট ফার্ম থেকে আমাদের একটি ডিজাইন পাঠানো হয়। তবে সেটি পছন্দ হয়নি। এরপর যে ডিজাইনটি পাঠানো হয়, সেটি সবার পছন্দ হয়। কারণ এটির নকশা ছিল ব্যতিক্রম। এই শহীদ মিনার কেবল ভাষাসৈনিকদের স্মরণে নয়; বরং ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মিনারের সামনের অংশ ইটের গাঁথুনি দিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু পরে সেটিতে ইট আকৃতির টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে। পেছনের অংশ সম্পূর্ণ সাদা। ব্যতিক্রম হওয়ায় এই শহীদ মিনার সবার নজর কাড়ে। কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুন্সী ইলিয়াস হোসেন ও বিধান অধিকারী জানান, শহীদ মিনার নির্মাণের আগে কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিষদ আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন। সেখানে আলোচনা হয়, এমন একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে, যা একটু ব্যতিক্রম। কেবলমাত্র ভাষাশহীদ দিবসই নয়, বরং স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসেও যেন সবাই সেই মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে পারেন। স্থপতি রেজাউল কবিরের নকশাটি সবাই পছন্দ করেন। পরে সেটির আলোকে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। কলেজের এই শহীদ মিনার ব্যতিক্রম জানিয়ে তালবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহনাজ পারভীন বলেন, এই অঞ্চলের আট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।