ব্যাংকিং খাত কি নিয়মে আসবে না?
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১ , ২:০৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
ব্যাংক পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অনিয়ম-দুর্নীতি, মন্দঋণ বৃদ্ধি- সব মিলিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্যাংকিং খাতে। বাড়ছে আর্থিক খাতে ঝুঁকি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কেবল আমানতকারী বা ব্যবসায়ীরাই ব্যাংকবিমুখ হবেন না- উৎপাদন, বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখনই সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। ব্যাংকে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন যদি সঠিকভাবে না হয় তাহলে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন আশা করা যায় না। গতকালের ভোরের কাগজে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে বড় শিল্পের মেয়াদি ঋণ আদায় কমেছে। অথচ একই সময়ে মাঝারি শিল্পের ঋণ আদায় বেড়েছিল। গত বছরজুড়েই বিশেষ ছাড় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যেই ব্যাংকগুলো সম্পর্কের ভিত্তিতে বিভিন্ন কৌশলে সিএসএমই, কৃষি, রিটেইল, ক্রেডিট কার্ডসহ ছোট ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করলেও বড়দের কাছ থেকে আদায় পরিস্থিতি ছিল খুবই নাজুক। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, অনিয়ন্ত্রিত খেলাপি ঋণ ও খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেই মূলত ব্যাংকিং খাতে এমন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। খাতটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়েছে। অবস্থার পরিবর্তনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু জোরালো তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। খেলাপি ঋণ আদায় ও ঋণ বিতরণে অনিয়ম বন্ধ করতে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি পাঁচ ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। খেলাপি ও কু-ঋণ আদায়ে আলাদা কোম্পানি গঠন, বড় ঋণখেলাপিদের যৌথভাবে তদারকি করা, দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা এবং ব্যর্থদের সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কোনোভাবেই ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু উদ্যোগগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা আমাদের নজরে পড়েনি। এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হলে নিশ্চয় ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে। গত কয়েক বছর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ঋণ আমানতের ‘নয়-ছয়’ ফর্মুলা। ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে বা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বেশ কয়েকবার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সুদের হার কমানোর শর্তে ব্যাংকগুলোকে ৫ ধরনের বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এসব সুবিধা নিয়েও তারা সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামাননি। আমরা মনে করি, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার বড় চ্যালেঞ্জ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকারের সামনে। শক্ত হাতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য সর্বপ্রথম ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দ্রুতই আর্থিক খাতের বিদ্যমান অবস্থার উন্নতি না ঘটলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভ‚মিকা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় আইন, গাইডলাইন এবং নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।