আজকের দিন তারিখ ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য ব্রাজিলের জাপাটিকাবা চাষ হচ্ছে বান্দরবানে

ব্রাজিলের জাপাটিকাবা চাষ হচ্ছে বান্দরবানে


পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৯, ২০২২ , ১১:০২ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দেলোয়ার হোসাইন : ব্রাজিলের সুস্বাদু ফল জাপাটিকাবা এখন চাষ হচ্ছে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের মাটিতে। পাহাড়ের আবহাওয়া আর জলবায়ু এই ফল চাষের উপযোগী হওয়ার কারণে ফলন ও হয়েছে বেশ আর্কষণীয়। কৃষি বিভাগ বলছে, পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় এই ফলের আবাদ বাড়লে একদিন কৃষি অর্থনীতিতে আবদান রাখতে সক্ষম হবে এই জাপাটিকাবা। দেখতে অনেকটা কালো আঙ্গুরের মতো। কেউ কেউ আবার দূর থেকে জাম বলেও ভুল করে থাকেন। ফলটির আসল নাম জাপাটিকাবা। ওষুধি গুণের ভরা ব্রাজিলের ফলটি এখন উৎপাদন হচ্ছে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে। রিপক্ক জাপাটিকাবা ফলের রং থাকে সবুজ আর পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। খাওয়ার যোগ্য হতে সময় লাগে এক থেকে দেড় মাস। বান্দরবানের হর্টিকালচার সেন্টার উদ্যানে চাষ হচ্ছে এই ফল। গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুরোটায় ফলে ভরপুর আর বিচিত্র এই ফলের রুপ দেখে বিমোহিত স্বয়ং হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মচারীরা। বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা অধীন চন্দ্র দে বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে চারটি জাপাটিকাবা গাছ রয়েছে। চারটির মধ্যে প্রচুর ফল হয় আর এক বছরে তিন বার ফল পাওয়া যায় গাছগুলো থেকে। জাপাটিকাবা গাছের ফলন দেখে বান্দরবানের চাষিরা এই ফলের চারা সংগ্রহ করেছে এবং ধীরে ধীরে এই চারা লাগাতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে রয়েছে ৪টি জাপাটিকাবা ফলের গাছ, আর গাছ লাগানোর পর দীর্ঘ ৮ বছর পর এই প্রথম সংগ্রহ করা হয়েছে কয়েক কেজি ফল। এদিকে নতুন এই ফলের সংবাদে অনেকেই এই গাছ আর ফল একনজর দেখতে ভীড় করছেন ওই সেন্টারে। বান্দরবান পৌরসভার বালাঘাটা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. জিয়াউদ্দীন বেড়াতে এসেছেন বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে। তিনি বলেন, জাপাটিকাবা গাছ আমার দেখা প্রথম এমন একটি গাছ যার সবখানেই ফলে ভরপুর। এমন সুমিষ্ট আর নয়নাভিরাম ফল দেখে যে কারোর মন ভরে যাবে। তিনি আরো বলেন, আমি কয়েকটি চারা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি এবং আশা করছি আগামীতে আমার বাগানে এই চারা রোপণ করে ভালো ফলন পাব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ সেন্টারের ম্যান্ডেট অনুযায়ী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উন্নত ফলের জাত সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ব্রাজিল থেকে এ জাতটি নিয়ে আসে। বান্দরবানের হর্টিকালচার সেন্টারে বীজ থেকে চারার মাধ্যমে আরো ৩টি মাতৃগাছের মাধ্যমে প্রাপ্ত বীজ থেকে চারা করে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা শুরু করে, ফলশ্রুতিতে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় উদ্যাগী বাগানীদের কাছে চারা যাচ্ছে সহজেই। পার্বত্য জেলার মাটি ও আবহাওয়া ভালো হওয়ায় এই বিদেশি ফল চাষ করে কৃষকদের অর্থনৌতিক উন্নয়ন ঘটবে আশা কৃষি বিভাগের।
হর্টিকালচার সেন্টার বান্দরবানের উপ-পরিচালক ড.সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, জাপাটিকাবা যা ব্রাজিলিয়ান আঙ্গুর গাছ হিসেবে পরিচিত। এটা ব্রাজিলের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের একটি স্থানীয় উদ্ভিদ হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে। এটা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। এই গাছ কিছুটা খরা সহিষ্ণু। জাপাটিকাবার ফুল সাদা রঙের অনেকটা তুলার মতো ফুটে এবং অতি দ্রুতই প্রথমে সবুজ পরে কাঙ্ক্ষিত রং ধারণ করে। ফলগুলো কালো আঙ্গুরের মতো সবগাছের শাখা-প্রশাখাকে আবৃত করে ফেলে, ফলে দারুণ একটা নান্দনিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। পরিপক্ক ফলের ভেতরে চারটি বীজ থাকে। প্রজাতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন আকার ও বীজের সংখ্যা থাকতে পারে। এই ফল সুমিষ্ট। পাকা ফল স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকায় এ ফল মূলত: জুস, জ্যাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তিনি আরো বলেন, যেখানে উপত্তিস্থল সেখানে কোন কোন ক্ষেত্রে বছরে কয়েকবার পর্যন্ত ফুল ও ফল হয়। সুমিষ্ট এ ফলে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, লৌহ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ফলিক এসিড বিদ্যমান। চির সবুজ সাধারণ উঁচু এ গাছ থেকে বীজ ও কলম দ্বারা বংশ বিস্তার সম্পন্ন হয়। বীজ থেকে চারার ক্ষেত্রে ফল ধারণ ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে, যদিও পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার কারণে ফল ধারণে সময়ের তারতম্য হতে পারে। কলমের চারায় ৫ বছরের পর থেকে ফলধারণ শুরু হয়ে যায়। তিনি  আরো বলেন, স্বল্প পরিসরে হলেও এর বিস্তার লাভ করেছে, এ ফলটি জনপ্রিয়করণে হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও চারা বিতরণের মাধ্যমে এর সম্প্রসারণের উদ্যোগ অব্যাহত আছে। ভোক্তার চাহিদা ও জনপ্রিয়করণে ফলন্ত মৌসুমে গাছ প্রদর্শনের মাধ্যমেও উদ্বুদ্ধকরণ অব্যাহত আছে। তিন পার্বত্য জেলায় শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির অভাব থাকে, আর এ গাছটি কিছুটা খরা সহনশীল বিধায় এ অঞ্চলে এর প্রসার ঘটানো সম্ভব। এ গাছের সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে বাগান করা গেলে পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।