ব্রিটেনে ৮০ বছরের বাংলাদেশি মুদিখানা ও আইরিশ তরুণী
পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২, ২০১৬ , ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: প্রবাসে বাংলা
অনলাইন ডেস্ক: পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেনে তাজ স্টোরসের সঙ্গে ব্রিটেনের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পর্ক বহু বহুদিনের। ঠিক দিন নয়, বহু বছরের। আসছে আগস্টে ৮০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে ব্রিটেনে প্রথম বাংলাদেশি মুদিখানা তাজ স্টোরস। সেই ১৯৩৬ সালে শুরু। বহু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও বহাল তবিয়তে তাজ স্টোরস। বেড়েছে কলেবর।
ব্রিটেনে বাংলাদেশি শাক-সবজী, মাছ, মসলার প্রথম দোকান এটি। ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের ইতিহাস লেখা হলে তাজ স্টোরসের নাম বাদ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাতকালে পারিবারিক এই ব্যবসার অন্যতম কর্ণধার জামাল খালিক জানিয়েছেন ব্যবসার শুরু, প্রসারসহ নানা কিছু। জানিয়েছেন এই মুদিখানাকে নিয়ে ছোটবেলার নানা স্মৃতি।
জামাল খালিকের বড় চাচা আব্দুল জব্বার কাজ করতেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে। তিরিশের দশকে যে জাহাজে তিনি কাজ করতেন সেটি ইংল্যান্ডের একটি বন্দরে নোঙর করার পর জাহাজ থেকে নেমে পড়েছিলেন তিনি। তারপর ঘুরতে ঘুরতে পূর্ব লন্ডনে আসেন।
“সে সময় পূর্ব লন্ডনে থাকতো ইহুদি এবং আইরিশরা। অনেক চামড়া এবং পোশাকের কারখানা ছিলো। বছর দুয়েক আমার চাচা কারখানায় কাজ করেছেন।”
কিছুদিন পর আব্দুল জব্বারের সাথে পরিচয় হয় স্থানীয় আইরিশ এক তরুণী ক্যাথলিনের সাথে। প্রেম থেকে পরিণয়।
”আমার সেই আইরিশ আন্টি খুবই ভালোবাসতেন আমার চাচাকে। তিনিই ব্রিক লেনে ছোটো একটি মুদিখানার দোকান খুলে দেন।” ১৯৩৬ সালের কথা।
”তাজ স্টোরসের পেছনে আমার সেই আন্টির অবদানই বেশি।”
প্রথমে আলু, পেঁয়াজ সহ স্থানীয় আইরিশ এবং ইহুদিরা ব্যবহার করে এমন কিছু পণ্য বিক্রি হতো। সত্তরের দশকে যখন বাংলাদেশিরা ব্রিক লেন এবং আশপাশের এলাকায় বসতি গড়তে থাকে, বাংলাদেশ থেকে শাক-সবজি, মাছ, মসলা আনা শুরু করে তাজ স্টোরস।
তবে এখন আরো বহু দেশের পণ্য বিক্রি হয় তাজ স্টোরসে। বেগুন, শিম, চিচিঙ্গা শুধু বাংলাদেশ থেকেই আসে না, অন্য অনেক দেশে থেকেই আসে।
”বলতে পারেন তাজ স্টোরস এখন আন্তর্জাতিক একটি সুপার মার্কেট।”
ব্রিক লেনে জন্ম এবং বড় হয়েছেন জামাল খালিক। ৪৫ বছর ধরে সেখানেই আছেন।
তিনি বলেন, ”এখন যে সুন্দর ঝকঝকে ব্রিক লেন দেখছেন, আমার ছেলেবেলায় তা ছিলো না। নোংরা, গন্ধ, অন্ধকার…প্রতি রবিবার ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বর্ণবাদী দল) লোকজন এসে হামলা করতো। বোতল, পেট্রোল বোমা ছুড়তো।”
তাজ স্টোরের ওপরেই থাকতেন তারা। ”ভয়ে থাকতাম। যদি ওরা উঠে আসে, সেজন্য আমরাও বোতল, লাঠি জড়ো করে রাখতাম।”
তাজ স্টোরস থেকে ব্যবসা অনেক বাড়িয়েছেন জামাল খালিক এবং তার ভাইয়েরা। কনস্ট্রাকশন কোম্পানি খুলেছেন। বাংলাদেশে এনআরবি ব্যাংক নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন অংশীদার তিনি।
কিভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত? জামাল খালিক বললেন, শাহরুখ খানের সূত্রে।
জানালেন বলিউড এই তারকার সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিশ বছরেরও পুরনো। ”শাহরুখ যখন বড় তারকা হননি তখন লন্ডনে তার সাথে পরিচয়। লন্ডনে এলেই তিনি আসতেন আমাদের দোকানে। এখনও নিয়মিত যোগাযোগ আছে।”
২০১০ সালে ঢাকায় এক কনসার্টে যাওয়ার সময় শাহরুখ খান জামাল খালিককে সাথে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
জামাল বলেন, ”আমাদের পৈতৃক বাড়ি মৌলভিবাজার। ছোটবেলায় মাঝে মধ্যে যেতাম, কিন্তু বাংলাদেশে কোনা বন্ধু ছিলো না। সেই প্রথম ঢাকায় গিয়ে কিছু বন্ধু হলো। তখনই বাংলাদেশে এমন কিছু করতে ইচ্ছা হলো, যাতে নিয়মিত একটা যোগাযোগ রাখা যায়।”
কিন্তু নির্মাণ কোম্পানির মালিক হোন, আর ব্যাংকের মালিক হোন, জামাল খালিক বললেন তাজ স্টোরসের জন্য তার টান সবচেয়ে বেশি। এজন্য লন্ডনে থাকলে প্রতিদিনই তাকে দোকানে দেখা যায়।
”যা কিছুই করেছি, তাজ স্টোরস থেকেই। ছোটবেলায় স্কুল থেকে আসার পর বাবার সাথে দোকানে ঝাড়পোছ, জিনিস সাজানো- নানা কাজ করতাম। খুব ভালো লাগতো। কাস্টমারদের সাথে প্রতিদিন মুখোমুখি দেখা, কথা – এগুলো খুবই ভালো লাগে।”
আশি বছর হলো, আর কতদিন থাকবে তাজ স্টোরস– হাসতে হাসতে জামাল খালিক বলেন, ”অন্তত একশো বছর পূরণ করবো ইনশাল্লাহ।” -বিবিসি বাংলা অবলম্বনে।
– See more at: http://www.bd-pratidin.com/probash-potro/2016/06/02/148475#sthash.zGRPlmId.dpuf