ভোলার কাঁকড়া শিকারীরা ভালো নেই
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৩, ২০২০ , ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
কুকরী-মুকরী, চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি : ভালো নেই ভোলার চরফ্যাশনের কুকরী-মুকরীর কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা। করোনা ভাইরাসের কারণে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন কাঁকড়া শিকারি ও ব্যবসায়ীরা। তবুও অনেক শিকারি ও ব্যবসায়ীরা তাদের পেশা ধরে রাখতে কাঁকড়া শিকার ও বিক্রি অব্যাহত রাখলেও স্থানীয় বাজারে তেমন দাম পাচ্ছেন না। এতে অনেক শিকারি বেকার হয়ে কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন। কেউ কেউ আবার লাভের আশায় পেশা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেলো, চরফ্যাশন উপজেলার সাগর উপকূলের এক সবুজের দ্বীপ কুকরী-মুকরী। এখানে শত শত কাঁকড়া শিকারি রয়েছে। অল্প পরিশ্রমে লাভবান হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন এ পেশায়। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। বাগানে নিচু এলাকা, খালের কর্দমাক্ত স্থান এবং নদীতে জাল ফেলেও বিশেষ ব্যবস্থায় কাঁকড়া শিকার করেন তারা।
ওই সব শিকারিদের আহরিত কাঁকড়া পাইকারদের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন তারা। পাইকাররা সেখান থেকে কাঁকড়া নিয়ে বড় বড় আড়তে বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠিয়ে দিতেন। সেখান থেকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাইরের দেশগুলোতে চলে যায় এসব কাঁকড়া। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকায় হঠাৎ করেই কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন শিকারি ও ব্যবসায়ীরা। দু’চারটি চালান পাঠানো হলেও তাতে লোকসান গুনতে হয় পাইকারদের। অনেক শিকারি কম টাকা পেলেও আর্থিক সংকট দূর করতে এখনো কাঁকড়া শিকার করছেন।
কাঁকড়া শিকারি রিয়াজ, দেলোয়ার, জুতিলালসহ অনেকে বলেন, আমরা কাঁকড়া শিকার করে আড়তে বিক্রি করছি। আগে আমরা অনেক ভালো দাম পেতাম কিন্তু এখন বাজার দাম কমে গেছে। আগে যেখানে কেজি প্রতি ২০০/৩০০ টাকা পেতাম। এখন পাই ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। তবুও জীবিকার টানে কাঁকড়া শিকার করছি এবং তা বিক্রি করছি। বর্তমানে কাঁকড়া শিকার করতে গিয়ে আমাদের যে পরিশ্রম হয়, তার অর্ধেক দামও পাচ্ছি না। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগে যেখানে শুধু কুকরী-মুকরী থেকে অর্ধশত ঝুড়ি কাঁকড়া রপ্তানি হতো সেখানে ৫/১০ ঝুড়ির বেশি কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে না। কখনো আবার এসব কাঁকড়া ফেরত চলে এলে তাদের কম দামে বিক্রি করতে হয়।
কাঁকড়া ব্যবসায়ী ও পাইকার খলিল এবং মফিজুল ইসলামসহ অনেকে জানান, করোনা ভাইরাসের আগে কাঁকড়ার চাহিদা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের পর থেকে এর চাহিদা অনেক কমে গেছে। কখনো কখনো কাঁকড়া পাঠানো হলেও আবার ফেরত আসে, তখন কম দামে বাজারে বিক্রি করতে হয়।
তারা আরো জানান, অনেকেই আবার ঘের থেকে বিক্রির জন্য কাঁকড়া পাঠাচ্ছেন, কিন্তু সময়মত তা সাপ্লাই দিতে না পারায় অনেক কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। সে কারণেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। আবার দুইদিন চালান নেয় তো সাতদিন বন্ধ থাকে। এভাবে আমরা ব্যবসায়ীরা কাঁকড়া নিয়ে বিপাকে আছি। করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এদিকে কাঁকড়া একটি লাভজনক পেশা হলেও লোকসানের মুখে অনেকেই কাঁকড়া শিকার বন্ধ করে দিয়েছেন। কম দামে বিক্রি করতে গিয়ে তাদের আগ্রহ কমে গেছে।
এ ব্যাপারে ভোলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কাঁকড়া শিকারি এবং ব্যবসয়ীদের আমরা উৎসাহ দিচ্ছি, তারা বর্তমানে কিছুটা লোকসানে থাকলেও পরবর্তীকালে সংকট কেটে যাবে বলে আমরা মনে করছি। অপরদিকে লকডাউন উঠে গেলে আবারো কাঁকড়া ব্যবসা জমজমাট হবে এমনটাই মনে করছে কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা।