ভ্যাট আদায়ে জটিলতা দূর করুন
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৯, ২০২১ , ২:৩৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
চলমান লকডাউনের কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট আদায়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে অনেকটাই গতি ফিরে পেয়েছিল অর্থনীতি। কয়েক মাস ধরে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলেও গতি আসে। ফলে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছিল। দ্বিতীয়বার লকডাউনের পর থেকে আদায়ে গতি নেই। গতকাল ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণের গড় প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ হলেও ভ্যাট আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৮৪ হাজার ৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ শুধু ভ্যাটেই রাজস্ব ঘাটতি ১৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। মহামারিকালে মানুষের আয়-উপার্জন কম। ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে। আমদানিও কম। তাহলে ট্যাক্স আসবে কোত্থেকে? দোকানপাটে বিক্রি নেই, ফলে ভ্যাট আদায়ও কম। আমরা অবশ্য জানি, বছরের শেষ দিকে সাধারণত রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পায়। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে আগামী ৪ মাসে প্রতি মাসে গড়ে ৪৪ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার-আয়তন, বাণিজ্যসহ অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত আমলে নিলে নির্দিষ্ট রাজস্ব আহরণ কঠিন কিছু নয়। পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে এটা সম্ভব। সরকারের লক্ষ্য ছিল ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে আয় বাড়বে। কিন্তু ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলেও লক্ষ্যমাত্রার উন্নতি নেই। এতে ভ্যাট আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা আদায় কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে এনবিআরের জন্য। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৬৭ শতাংশ কোটিপতি কর আওতার বাইরে। অর্থাৎ দেশের ৬৭ শতাংশ কোটিপতি আয়কর দেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এনবিআরের। কারণ তারা করনেট সারাদেশে ছড়াতে পারেনি। যে কারণে রাজস্ব আহরণ কম হচ্ছে, করদাতাদের ওপর বাড়তি করের চাপও তৈরি হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করের আওতা বাড়ানোসহ নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা খুবই শ্লথগতির। বিনিয়োগ বাড়াতে পারলেই কেবল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। বাস্তবতা হলো দেশের সক্ষম শ্রেণির অধিকাংশ যেমন আয়কর দিতে চান না, তেমনি ভ্যাট দিতে অনীহা প্রকাশ করেন একশ্রেণির ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং দোকানদার। অথচ ভ্যাটের দায় গিয়ে বর্তায় সাধারণ নাগরিকের ওপর। যথাযথ ভ্যাট প্রদান কিন্তু নাগরিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার সমৃদ্ধকরণ তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নে মূসক বা ভ্যাটের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দরকার করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি। সেখানে রাজস্ব প্রদানে সেবা নিশ্চিত, অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইন-কানুন সময়োপযোগী করা গুরুত্ব পাবে। পরিকল্পনাজনিত সমস্যা তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নানা জটিলতা। আছে দুর্নীতির অভিযোগও। এসব বিষয়ে সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। রাজস্ব আয় ব্যবস্থাপনা সহজ করার পাশাপাশি কর ফাঁকিবাজদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনার দায়িত্বও সরকারকে নিতে হবে।