মহামারিতেও পাচার ও অভিবাসনের ঝুঁকি কমেনি
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৩১, ২০২১ , ৩:০৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
কোভিড-১৯ মহামারি পাচার ও অনিয়মিত অভিবাসনের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ৮ জুলাই ভ‚মধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া একটি নৌকা থেকে ৪৯ জন বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী উদ্ধার এবং দুদিন পরই রাশিয়ায় খেলা দেখতে যাওয়া ১৮ জনকে ফেরত পাঠানোর ঘটনা এর বড় প্রমাণ। তথ্য বলছে, ভ‚মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়া লোকজনের মধ্যে শীর্ষে এখন বাংলাদেশ। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করা ব্যক্তিদের ১৪.৫ শতাংশই বাংলাদেশি। প্রাণঘাতী ঝুঁকি-বিপত্তির পরও অবৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হচ্ছে না। কারণ সরকারের নীতি ও করণীয় সম্পর্কে স্বচ্ছতার অভাবকে দায়ী করা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রায় সব পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই নানা উপায়ে অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এতে তারা প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। বিদেশ গমনেচ্ছুদের দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। মৌখিক প্রচারণায় বলা হয় শিপ দিয়ে তারা ইউরোপের মানবাধিকার দেশ ইতালিতে পাড়ি জমান। বাস্তবতা হলো, শিপ নয় এ যেন মৃত্যুর এক ফন্দির নাম প্লাস্টিকের বোর্ড। প্রত্যক্ষদর্শী এমন অনেকেই আছেন ভ‚মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে জীবন ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশযাত্রা রোধে ও দালাল প্রতারকদের দৌরাত্ম্য কমানোর ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় জনশক্তি রপ্তানির উদ্যোগ বেশ আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় কার্যকর না থাকায় এসব অবৈধ তৎপরতা থামেনি। অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রা রোধ ও বিদেশে নিরাপদ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বৈধ পথে কম খরচে প্রবাসে কর্মসংস্থানের সরকারি উদ্যোগে গতি আনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যদিকে দেশের দরিদ্র নারী ও শিশুরা পাচারকারী চক্রের হাতে পড়ে যায় সামান্য প্রলোভনে। মূলত অজ্ঞতা ও দারিদ্র্যের জন্যই ঘটছে এই পাচারের ঘটনা। বাংলাদেশের পাচারকারীরা ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত ব্যবহার করে পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নারীদের পাচার করে। দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্ত পথ দিয়ে পণ্যসামগ্রী পাচারের পাশাপাশি নারী ও শিশু পাচার হয়ে থাকে। সরকার নারী ও শিশু পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করাসহ পুলিশ সদর দপ্তরে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং সেল। স্থল ও বিমানবন্দরগুলোতে নেয়া হয়েছে বিশেষ তল্লাশির ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটিও কাজ করছে। আবার উদ্ধারকৃত নারী ও শিশু পুনর্বাসনের জন্যও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা ও কর্মসূচি। নারী ও শিশু পাচার রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যম নিতে পারে বড় ধরনের ভ‚মিকা। সুসংঘবদ্ধ পাচারকারীরা বছরের পর বছর এ অপরাধ সংঘটিত করে চললেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় মনোভাবের কারণে। নারী-শিশু পাচার বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকারের দায়বদ্ধ ভ‚মিকা দেখতে চাই।