মালিকানা নিতে মিনোরির ফের তৎপরতা, এমারেল্ড অয়েল শেয়ার দরে উত্থান
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৬, ২০২১ , ২:৪৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : এক মাসেরও কম সময়ে দ্বিগুণ হলো প্রায় ছয় বছর ধরে বন্ধ কোম্পানি এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারদর। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর জাপানি কোম্পানি মিনোরি কোম্পানিটির মালিকানা নিতে পুনরায় তৎপরতা শুরুর খবরে শেয়ারটির দর হুহু করে বাড়ছে। জাপানি মিনোরি কোম্পানি বাংলাদেশি প্রবাসী মিয়া মামুনের মালিকানাধীন একটি কোম্পানি। জাপানে তার প্রধান ব্যবসা চেইন রেস্টুরেন্ট। পাশাপাশি রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন ও বাজারজাতকারী কোম্পানিও রয়েছে। ২০১৯ সালে এমারেল্ড অয়েলের মালিকানা নিতে পদক্ষেপ নিয়েছিল এ কোম্পানি।
এমারেল্ড অয়েল স্পন্দন নামে রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন ও বাজারজাত করতো। বছর ছয়েক ধরে কোম্পানিটির উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে থাকা কোম্পানির মালিকানা নিতে এগিয়ে এসেছে জাপানি কোম্পানি- এ খবর আগাম প্রকাশের পর শেয়ারটির দরও তখন অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। সে সময়ে এমারেল্ড অয়েলের পলাতক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিবের শেয়ারসহ সব উদ্যোক্তাদের শেয়ার কিনে মালিকানায় বসতে মিনোরি বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানির নিবন্ধন আরজেএসসি এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে অনুমোদন নেয়। এমনকি শেয়ারের মালিকানা নিতে বিও অ্যাকাউন্টও খোলে কোম্পানিটি। তবে মালিকানা হস্তান্তরে প্রধান বাধা ছিল বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণসহ তিন ব্যাংক ও দুইটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৭০ কোটি টাকার ঋণ দাবি। সুদ মওকুফের শর্তে মিনোরি বাংলাদেশ বেসিক ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল বা পরিশোধে রাজি হয়েছিল বলে জানা যায়। এজন্য ব্যাংকের শর্ত মেনে বেসিক ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে ২ কোটি টাকা জমা এবং লিখিত প্রস্তাব করা হয়। এমনকি ব্যাংক এশিয়াসহ অন্য ঋণদাতা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করে পুনঃতফসিল করার বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের ‘অসহযোগিতায়’ ফিরে যায় কোম্পানিটি। বর্তমান শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দায়িত্ব গ্রহণের পর বন্ধ ও রুগ্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়ার পর পুনরায় আলোচনায় আসে মিনোরি। এখনও মালিকানা নিতে আগ্রহ রয়েছে জানার পর বিএসইসি এ কোম্পানিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পুনরায় তৎপরতা শুরুর উৎসাহ দেয়। এ খবরে আবার হুহু করে বাড়ছে এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারদর। মঙ্গলবার কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ দর উঠে ৩৪ টাকা ২০ পয়সা। সার্কিট ব্রেকারের (নির্দিষ্ট দিনে কেনো শেয়ারের সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ লেনদেনের দর সীমা) নিয়ম অনুযায়ী আজ এর চেয়ে বেশিতে শেয়ারটি কেনাবেচার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ দরে ওঠার পর শেয়ারটি বিক্রেতা শূন্য অবস্থায় পড়েছিল। এ অবস্থায় অনেক বিনিয়োগ মূলধনবৃদ্ধিজনিত মুনাফা তুলে নিতে শেয়ার বিক্রি করলে কিছুটা নেমে এসেছে শেয়ারটির দর। দুপুর ১২টায় শেয়ারটিকে ৩২ টাকা ৪০ পয়সা দরে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। গত ফেব্রুয়ারির শেষেও শেয়ারটি অভিহিত মূল্য ১০ টাকার কমে কেনাবেচা হয়। এরপর চার মাস না পেরোতেই শেয়ারটির দর সাড়ে তিনগুণ বেড়ে এখন ৩৪ টাকা ছাড়ায়। মাত্র এক মাস আগেও শেয়ারটির ১৮ টাকায় কেনাবেচা হয়। সে হিসেবে এক মাসেই এ শেয়ারের দর প্রায় দ্বিগুণে উন্নীত হয়েছে। গত ২ মার্চ সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হককে বিএসইসির পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান করে নিয়োগ প্রদানসহ মোট পাঁচজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে শেয়ারটির দর বাড়ছে। দিয়ে কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করার আদেশ দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বাকি চার পরিচালক হলেন- বিআইবিএমের ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার, সজিব হোসাইন এবং সহকারী অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার দেব।
জানা গেছে, মিনোরি বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রায় ৯ শতাংশ শেয়ার কিনেছে। এরপর সিরদাতুল মাহবুব হাসানকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত পরিচালক করেছে মিনোরি বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে ব্যবসা কার্যক্রম শুরুর পর ২০১৪ সালে আইপিও প্রক্রিয়ায় শেয়ার বিক্রি করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারীর মামলায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিব গ্রেপ্তারের পর সংকটে পড়ে কোম্পানি। এরপর জামিন পাওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। তার আগেই অবশ্য বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটি।
বর্তমানে এ কোম্পানির কোনো কর্মী বা শ্রমিক নেই। ২০১৯ সালে মিনোরির মালিক মিয়া মামুন বাংলাদেশে এসে শেরপুরে এমারেল্ড অয়েলের কারখানা পরিদর্শন করেছিলেন।
সর্বশেষ অবস্থা জানতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ সাড়া দেননি। পর পর দুই কার্যদিবসের বড় উত্থানের পর আজ দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিএসইতে ১৩৯ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড দর বেড়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। বিপরীতে দর হারিয়ে কেনাবেচা হচ্ছিল ২১৭ শেয়ার। এ সময় দর অপরিবর্তিত অবস্থায় ছিল ১৮টি।
ডিএসইএক্স সূচক ২৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৬১৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে। যদিও দিনের লেনদেনের শুরুতে আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট বেড়ে সূচকটি ৬২৪১ পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল। এরপর থেকে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন চলছে।
আজকের লেনদেনের প্রথম আড়াই ঘণ্টায় ১ হাজার ৩৫৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় কেবল আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতেরই প্রায় সব শেয়ার দর বেড়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। এ সময় অন্য সব খাতেরই অধিকাংশ শেয়ার দর হারিয়ে কেনাবেচা হচ্ছিল। দরবৃদ্ধির ধারায় ছিল সব মিউচুয়াল ফান্ড। দর হারানো ও বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ার সংখ্যার ব্যবধান কম ছিল বস্ত্র এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের।