আজকের দিন তারিখ ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
স্পোর্টস লীড মেসির মুখে হাসি ফিরেছে

মেসির মুখে হাসি ফিরেছে


পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ১০, ২০২২ , ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: স্পোর্টস লীড


দিনের শেষে ডেস্ক : এক বছর আগে, ক্যাম্প ন্যুয়ে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন লিওনেল মেসি। নিজে অঝোর ধারায় কেঁদে এবং সমর্থকদের কাঁদিয়ে বিদায় বলে দেন প্রিয় ক্লাব বার্সেলোনাকে। যে ঘটনা লাখো বার্সা-সমর্থকের হৃদয় বিদীর্ণ করে দিয়েছিল। ভাঙা মন নিয়ে এরপর স্যুটকেস গুছিয়ে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড পাড়ি জমান পিএসজিতে।
ছুটি কাটিয়ে ফিরে বার্সার সঙ্গে চুক্তি নবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ‘খুদে জাদুকর’; সেই প্রিয় ঠিকানা যে তার কিছুদিন পরেই ছাড়তে হবে তা হয়তো তিনি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি। সেই যে চোখের পানি মুছতে মুছতে গেলেন, এরপর তার মুখে প্রকৃত হাসির দেখা মিলেছে কালেভদ্রে দুয়েকবার। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার জার্সিতে বিশ্বকাপ বাছাই কিংবা গত কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতার পর তাকে প্রাণ খুলতে হাসতে দেখা গেলেও প্যারিসিয়ানদের হয়ে মাঠে নামলেই যেন তা উধাও।

আর্থিক দুরবস্থার মুখে পড়া বার্সা মেসিকে ছেড়ে দিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু কৈশোর থেকে যেখানে খেলে মহাতারকা হিসেবে অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি, তা কি সহজে ভোলা সম্ভব? তবে তারচেয়েও বড় কথা, ক্যাম্প ন্যু ছিল তার নিজের ঘরের মতো। তার স্ত্রী-সন্তানরাও ওই শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। ফলে বার্সা ছাড়ার কথা তারা কোনোদিন হয়তো ভাবেননি। কিন্তু প্যারিসে যাওয়া যে নিয়তিতেই ছিল! ম্যানচেস্টার সিটি আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত কাতারি মালিকানাধীন ক্লাবটিকেই নিজের পরবর্তী ঠিকানা বানাতে হলো মেসিকে।

প্যারিসে গিয়ে একেবারে অকুল পাথারে পড়ে গিয়েছিলেন মেসি। নতুন দেশ, নতুন পরিবেশ, নতুন ক্লাব, নতুন সতীর্থ, নতুন লিগ’ সবমিলিয়ে মানিয়ে নিতে হিমশিম খেয়েছেন তিনি। তাছাড়া প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতটাও ঠিকমতো নিতে পারেননি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। ভুলে যাওয়ার মতো একটা মৌসুম কাটিয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। যদিও গতবার ফরাসি লিগ ওয়ানের শিরোপা ঘরে তুলেছে তার দল; কিন্তু মেসির নিজের ফর্ম তার সেরার ধারেকাছেও ছিল না।

মেসি যখন পিএসজিতে যোগ দেন তখন ধরেই নেওয়া হয়েছিল, প্যারিসের ক্লাবটি সর্বজয়ী দলে পরিণত হবে। এমবাপ্পে-নেইমারকে নিয়ে বার্সেলোনার অবিস্মরণীয় ‘এমএসএন’ ত্রয়ীর মতো পিএসজিতে ‘এমএমএন’ জুটিও ত্রাস ছড়াবে এমনটা ধারণা করা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। মেসি নিজে ছিলেন নিজের ছায়া হয়েই। আগের মৌসুমেই যিনি বার্সার হয়ে ৩০ গোল করে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে ‘পিচিচি অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিলেন, সেই তিনি গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মেসির গোল মাত্র ১১টি। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে করেছেন পাঁচটি।

মেসি-ভক্তরা অবশ্য এবার আশায় বুক বাঁধতেই পারেন। কারণ তাদের প্রিয় ফুটবলার এবার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছেন। প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিতে আলো ছড়িয়েছেন। ফরাসি সুপার কাপের ফাইনালে নঁতের বিপক্ষে গোল করেছেন। এরপর লিগে দলের প্রথম ম্যাচে ক্লেহমোঁর বিপক্ষে জোড়া গোল করার পাশাপাশি নেইমারকে দিয়ে একটি গোল করিয়েছেন। এর মধ্যে শেষোক্ত ম্যাচে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বাইসাইকেল কিকেও গোল করেছেন। পুরো ম্যাচেই বেশ কয়েকবার তার পায়ে দেখা গেছে পুরনো জাদুর ঝলক। গোল করার পর সতীর্থদের সঙ্গে তার উচ্ছ্বাসও ছিল চোখে পড়ার মতো। তাহলে কি মেসি নিজের পুরনো রূপ ফিরে পেয়েছেন?

মেসির এই পরিবর্তনের পেছনে কারণ কি? এর উত্তর পাওয়া যাবে ফরাসি ক্রীড়া সাংবাদিক সিরিল মোরিনের কথায়। তার মতে, মাওরিসিও পচেত্তিনো বিদায় নেওয়ার পর দায়িত্ব বুঝে নিয়েই দলে কিছু পরিবর্তন এনেছেন নতুন কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের। যার ফল আসতে শুরু করেছে বলে মত দিলেন তিনি, ‘পার্থক্যটা পরিষ্কার। সবার আগে সিস্টেম। এখন পিএসজি ৩-৪-৩ ফরম্যাশনে খেলছে, যেখানে মেসি ও নেইমার স্বাধীনভাবে খেলতে পারছে। তাদের পেছনে উইং-ব্যাক হিসেবে থাকছে আশরাফ হাকিমি এবং নুনো মেন্দেস। এর ফলাফল দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। পচেত্তিনোর সময় এমন পরিকল্পনা দেখে যায়নি। এখনই হয়তো কিছু অনুমান করা ঠিক হবে না, তবে শুরুটা অবশ্যই ভালো হয়েছে। ‘

মোরিনের মতে, পিএসজির আক্রমণভাগে মেসি ও নেইমারের স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগটাই গুরুত্বপূর্ণ। দুজনে একই সময়ে, বিশেষ করে মেসি আক্রমণের কেন্দ্রে অবস্থান করেন। মেসিকে তাই স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানো হলেও ফরোয়ার্ডের ভূমিকায় দেখা যায়। মেসি ও নেইমার যেকোনো সময় জায়গা বদল করতে পারেন। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররাও তাতে ধোঁকা খায়। মেসির বয়স অনুযায়ী পজিশন ঠিক করাটাই গালতিয়েরের অন্যতম প্রধান কাজ। বার্সার ৪-৩-৩ ফরম্যাশন এখানে কাজ করবে না। পচেত্তিনোও তাকে কোথায় খেলাবেন তা ঠিক করে উঠতে পারেননি। তাকে ১০ নম্বর হিসেবে নাকি মিডফিল্ড পজিশন আরও উন্মুক্ত রেখে বেশি জায়গা করে দেবেন তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন আর্জেন্টাইন কোচ।

গালতিয়েরের ৩-৪-৩ ফরম্যাশনই এখন পর্যন্ত মেসির জন্য আদর্শ মনে হচ্ছে। দুজন উইং-ব্যাক থাকায় ডিফেন্স নিয়েও তেমন চিন্তায় থাকতে হচ্ছে না কোচকে। কারণ মাঝে দুজন মিডফিল্ড সামলাচ্ছেন। ফলে বল নিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের পিএসজির ডিফেন্সে ঢোকার আগেই বড় বাধা পার হয়ে আসতে হবে। এরপর তিন সেন্টার-ব্যাক তো আছেই, যারা অতন্দ্র প্রহরীর মতো ডিফেন্স সামলানোর দায়িত্বে থাকবেন। এর মধ্যে আবার রাইট-ব্যাক রামোস উইংয়ে বল যোগান দিতে বেশ পারদর্শী। এমনকি প্রতিপক্ষের রক্ষণে মাঝে মাঝে হানা দিতেও দেখা যায় তাকে। বিশেষ করে কর্নার কিক থেকে বল পেলে হেড করার জন্য তৈরি থাকেন এই সাবেক রিয়াল তারকা। অন্যদিকে ইনজুরি আক্রান্ত কিলিয়ান এমবাপ্পে সুস্থ হয়ে ফিরলে ফের ‘এমএনএম’ ত্রয়ীর দেখা তো মিলবেই। এবার যদি তাদের ত্রয়ী ঠিকঠাক ‘ক্লিক’ করে আর গালতিয়েরের পরিকল্পনা যদি কাজ করে, তাহলে বাকি দলগুলোর জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

মেসির জন্য এ বছরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সামনে কাতার বিশ্বকাপ, যা আবার তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপও বলা যায়। আর্জেন্টিনার জার্সিতে এই একটা শিরোপা না জিততে পারার আক্ষেপ নিয়ে নিশ্চয়ই অবসরে যেতে চাইবেন না তিনি। কোপা জেতার পর আর্জেন্টাইন সমর্থকদের প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে অনেক। পিএসজির সাফল্যের জন্যও মেসির বিশ্বকাপ জেতা জরুরি। কারণ এবারও বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে খালি হাতে ফিরলে তার প্রভাব থাকবে দীর্ঘদিন। ফলে ফরাসি জায়ান্টদের সাফল্যের জন্যও মেসির চওড়া হাসিটার খুব দরকার। এখন মেসির মুখে যে হাসিটা ফিরেছে, তা যেন মৌসুমের শেষ পর্যন্ত থাকে; আর্জেন্টিনা-পিএসজির সমর্থকরা এমনটাই চাইবেন নিশ্চিতভাবেই।