মেসি-এমিলিয়ানো ঝলকে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা
পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: স্পোর্টস
দিনের শেষে ডেস্ক : ফুটবল কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকায় কাল হাসছিল আর্জেন্টাইন সমর্থকে ঠাসা লুসাইল স্টেডিয়ামের গ্যালারি। এই হাসি ছড়িয়ে পরছিল তামাম দুনিয়ার আর্জেন্টিনার ভক্ত-সমর্থকদের মাঝেও। তারা প্রস্তুত হচ্ছিল রঙিন উৎসবের। তখনই ১৫ মিনিটের এক ঝড়ে থেমে যায় নীল-সাদার উত্তাল ঢেউ, শুরু হয় কমলা রংয়ের উন্মাদনা। অবশেষে সমতা ভাঙার লড়াইয়ে নায়ক বনে গেলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। প্রতিপক্ষের দুটি শট ঠেকিয়ে দলকে তুলে নিলেন কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। লুসাইল স্টেডিয়ামে শুক্রবার দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ২-২ গোলের সমতায় শেষ হয়। পরে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতে উল্লাসে মাতে আর্জেন্টিনা। আগামী ১৪ই ডিসেম্বর এই লুসাইল স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ নেইমারদের বিদায় করা ক্রোয়েশিয়া। ২০০২ বিশ্বকাপ জেতার পর টানা চার আসরে নকআউট পর্বে ব্রাজিল থামে ইউরোপের চার দলের বিপক্ষে হেরে।
নেইমারের রেকর্ড ছোঁয়া গোলে মনে হচ্ছিল কেটে যাচ্ছে সেই গেরো। কিন্তু লক্ষ্যে রাখা একমাত্র শটেই গোল করে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। সেখানে শেষ হাসি হাসে গতবারের রানার্সআপরা। ব্রাজিলের বিদায়ের পরই শঙ্কা জেগেছিলো আরেক লাতিন দল আর্জেন্টিনাকে নিয়ে। তবে সেই শঙ্কা উড়িয়ে মাঠের খেলায় ঝলক দেখান মেসি। নিজে এক গোল করার সঙ্গে এক অ্যাসিস্ট করেন তিনি। পরে টাইব্রেকারে আলো কাড়েন এমিলিয়ানো।
গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই শুরুর একাদশে ছিলেন আনহেল ডি মারিয়া। কিন্তু বাঁ ঊরুর চোটে শেষ ষোলোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে পারেননি আর্জেন্টাইন উইঙ্গার। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও একাদশে রাখা হয়নি এই জুভেন্টাসের ফরোয়ার্ডকে। আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি এদিন দল সাজান ৫-৩-২ ছকে। মিডফিল্ডার আলেহান্দ্রো গোমেসের জায়গায় নেওয়া হয় ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্টিনেজকে। তিন সেন্টার-ব্যাকের পাশে দুই উইংব্যাক হিসেবে নামেন নাহুয়েল মোলিনা ও মার্কোস আকুনিয়া। বোঝাই যাচ্ছিল, গোল খেতে চায় না আর্জেন্টিনা। শুরুর দিকে ওইভাবে গোলের ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না কোনো দলই। তবে গোলরক্ষক আন্দ্রিস নেপোর্টের ভুলে ম্যাচের ৮ মিনিটেই একটা বিপদ হতে পারত নেদারল্যান্ডসের। বক্সে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হুলিয়ান আলভারেজ থাকার পরেও সতীর্থকে পাস বাড়ান নেপোর্ট। আলভারেজ বলটা নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারায় বেঁচে যায় ডাচরা। ডেনজেল ডামফ্রিস কয়েকবার চেষ্টা করেছেন আক্রমণে যেতে, তবে তাকে সামলে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডাররা। এর মধ্যেই ২২ মিনিটে মেসি একটা শট নিয়েছেন, তবে সেটা গোলমুখের ধারেকাছেও যায়নি। ৩৩ মিনিটে রদ্রিগো ডি পল শট নিয়েছেন। তবে এত দুর্বল শট ছিল সেটা, গোলরক্ষকের কষ্টই হয়নি সেটা ধরতে। মেসির জাদুকরী মুহূর্তটা আসে এরপরপরই। ডান দিক দিয়ে গড়ে ওঠা আক্রমণে বল নিয়ে এগিয়ে যান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তারপর একটু বাঁ দিকে গিয়ে অসাধারণ এক পাস বাড়ান মোলিনার দিকে। দারুণ ফিনশিংয়ে বল জালে পাঠান মোলিনা। এটি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মোলিনার প্রথম গোল। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে মেসির ফ্রিকিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে গোল বঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৭২ মিনিটে বক্সের মধ্যে আকুনাকে ফেলে দেন ডামফ্রিস। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সেই পেনাল্টি থেকেই গোল করে ব্যবধান ২-০ করেন লিওনেল মেসি। এই গোলের মাধ্যমে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ধরে ফেললেন মেসি। বিশ্ব মঞ্চে বাতিস্তুতা ও মেসির গোল সমান ১০টি করে। ৬ গোল নিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন ৩৫ বছর বয়সী মেসি। আসরে পাঁচ ম্যাচে তার গোল হলো ৪টি। শেষ ষোলোয় অস্ট্রেলিয়ার জালে বল পাঠিয়ে দিয়েগো ম্যারাডোনার ৮ গোল ছাড়িয়ে যান তিনি। এবার পাশে বসলেন বাতিস্তুতার।
৮২তম মিনিটে একটি গোল পরিশোধ করে নেদারল্যান্ডস। ডানদিক থেকে সতীর্থের ক্রস ১২ গজ বক্সে পেয়ে দারুণ গোলে স্কোরলাইন ২-১ করে ফেলেন ভাউট ভেগোর্স্ট। যোগকরা ১০ মিনিটের একেবারে শেষ সময়ে এক ফ্রিকিক থেকে ম্যাচে ২-২এ সমতা আনে নেদারল্যান্ডস। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে সমতা থাকলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার গোল করেন মেসি, পারেদেস, মন্তিয়েল, লাওতারো মার্টিনেজ। মিস করেন এনজো ফার্নান্দেজ। আর ভ্যান ডাইক আর ভার্গিসের টাইব্রেকার আটকে নায়ক বনে যান আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ।