মোংলা-পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর সতর্কতা সংকেত
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: নভেম্বর ১৭, ২০২৩ , ১২:২৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’-তে রূপ নিয়েছে।
আজ শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর থেকে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রপ্রান্ত উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাশাপাশি মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। সকাল সাড়ে নয়টায় আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়। একই সময় উপকূলীয় এলাকায় ৩-৫ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কাও জানানো হয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (২০ দশমিক ৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ খেপুপাড়ার নিকট দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রপ্রান্ত শুক্রবার দুপুর নাগাদ উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৭ নম্বর সতর্কতা সংকেত এবং পুনরায় ৭ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৬ নম্বর সতর্কতা সংকেত পুনরায় ৬ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মোংলা বন্দর ও পৌর শহরসহ উপকূলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পৌর শহরের প্রায় সব দোকানপাটই বন্ধ রয়েছে। রাস্তাঘাটও ফাঁকা।
আবহাওয়া খারাপ হতে থাকলে গত রাতে বন্দরে অবস্থানরত সব বিদেশি জাহাজের পণ্য খালাস কাজে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের নামিয়ে আনা হয়। এরপর রাত থেকে কাজ বন্ধ থাকে। আর ৭ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারির পর বন্দরে অবস্থানরত ১৫টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য ওঠানামা ও পরিবহনের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী হারবার মাস্টার (অপারেশন) আমিনুর রহমান বলেন, ‘আবহাওয়া অফিস ৭ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করার পর বন্দরের নিজস্ব অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্দরে অবস্থানরত বিদেশি জাহাজের কাজ বন্ধসহ জাহাজগুলোকে নিরাপদে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ ইউএনও দীপংকর দাশ বলেন, ‘৭ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারির পর বিশেষ করে অধিক ঝুঁকিতে থাকা পশুর নদীর পাড়ের জয়মনিরঘোল, চিলা, কানাইনগর এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রের যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এখানে ১০৩টি আশ্রয় কেন্দ্র, ১৩০০ স্বেচ্ছাসেবক, ছয়টি মেডিকেল টিম প্রস্তুতসহ পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও ওষুধ মজুদ করা হয়েছে।’ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা লক্ষীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।