যুদ্ধাপরাধ বিচারে স্থবিরতা দুঃখজনক
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ১৫, ২০২১ , ১২:৪১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
করোনার কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ এক প্রকার বন্ধ ছিল। বর্তমানে বিচারিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও মামলাগুলোর কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশ, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা ২৯টি মামলার মধ্যে গত চার বছরে শুনানি হয়েছে মাত্র একটির। জনবলের অভাবে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যক্রমও অনেকটা স্থবির। বিচার প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ায় বিচারপ্রার্থী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বের কারণে সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি, যুদ্ধাপরাধ মামলার আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগ দ্রুত নিতে হবে। না হলে একে নিয়ে রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব-বিবাদ প্রলম্বিত হতে থাকবে। তাই বিচার ও রায় কার্যকর করে এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি খুব জরুরি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ২০১০ সালের ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২০১৩ সাল থেকে রায় দেয়া শুরু হয়। এরপর প্রতি বছরের প্রতিটিতে কোনো না কোনো মামলার রায় হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর গত প্রায় ১১ বছরে ৪২ মামলায় মোট সাজা দেয়া হয়েছে ১০৩ জনকে। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে ৭১ জনের। সর্বশেষ রায় হয়েছে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর। ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১০টি মামলা। এর মধ্যে ৬টি রায় কার্যকর হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আব্দুল কাদের মোল্লা ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ৬ জনের। সর্বশেষ কার্যকর হয়েছে ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামায়াতের মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায়। ঘোষিত রায়ের মধ্যে আপিল বিভাগে বর্তমানে বিচারাধীন ২১টি মামলা। প্রায় ৪ বছর আপিল বিভাগে এই মামলাগুলোর কোনো শুনানি হয়নি। এসব মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আসামি অন্তত ৩৩ জন। মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতের হেভিওয়েট নেতা দলের নায়েবে আমির আবদুস সুবহান, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলাও। এই মামলাগুলো চূড়ান্ত শুনানি বিলম্বিত হওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের উদ্যোগের অভাবকেই দায়ী করা হচ্ছে, যা অনাকাক্সিক্ষত। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনে আপিল বিভাগে বিশেষ বেঞ্চ গঠন দরকার হলে তাও করা উচিত। এ বিচারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করা। মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোও গণহত্যার বিচারে অনন্য নজির স্থাপন করেছে, যা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অপ্রতিরোধ্য অঙ্গীকারের প্রতিফলন। প্রকাশ্য, স্বচ্ছ এবং অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সব ধরনের সুযোগ নিশ্চিত করে এ বিচারব্যবস্থা আগ্রহ ও নজর কেড়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের। আশা করছি, ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ চালিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন। তা না হলে গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।