‘রাজনৈতিক নিপীড়নের উদ্দেশ্য নিয়ে কাউকে ধরিনি’
পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৫, ২০১৬ , ৮:৪৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক: দেশব্যাপী চলমান সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা কোলো ইল মোটিভ (খারাপ উদ্দেশ্য) ও পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) নিপীড়নের উদ্দেশ্য নিয়ে কাউকে ধরিনি।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠকের পর সচিবালয়ে বুধবার নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
গ্রেফতারের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানতে চেয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা বিশেষ কিছু নয়, কোনো রাজনৈতিক নেতাকে আটক করিনি। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের জন্য এটা করিনি। আমার সন্দেহভাজক টেররিস্ট ও আদালত কর্তৃক নির্দেশিত (ওয়ারেন্টভুক্ত) ক্রিমিনালদের ধরার জন্যই এটা (সাঁড়াশি অভিযান) করছি।’
বিএনপি দাবি করেছে গ্রেফতার করা অর্ধেকই বিএনপির নেতাকর্মী―এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি দাবি করছে কেন আমার জানা নেই। আমার মনে হয় যারা ক্রিমিনাল সবাই বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। কোর্ট থেকে যেগুলো আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি, হয়তো সে ধরনের যারা ক্রিমিনাল তারা বিএনপির সদস্য হতে পারে, সেটা আমাদের জানা নেই।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের বিশেষ অভিযানে একটা হিউজ নাম্বার বন্দি হয়েছে। রাষ্ট্রদূত এটার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, সারা বাংলাদেশে ৬৩০টি থানা রয়েছে। প্রতিটিতে ২০ জন করে অ্যারেস্ট হলেও প্রতিদিন অনেক হয়।’
‘আমাদের যে রেগুলার প্র্যাকটিস প্রতিদিন কমবেশি ২ হাজার অ্যারেস্ট হতো আগেও। কাজেই সাত দিনে এ ফিগারটা (গ্রেফতারের সংখ্যা) অধিক নয়। এটা নরমাল প্র্যাকটিসের মতোই। অতিরিক্ত কাউকে ধরা হয়নি। রিসেন্ট মার্ডারের সঙ্গে জড়িত যারা সে টেররিস্টদের আমরা ধরেছি’, বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হাতেগোনা কয়েকজন সন্দেহভাজন জঙ্গি ধরেছি, তার সংখ্যা খুবই কম। এগুলো বিশেষ করে ওয়ারেন্টের আসামি ছিল। জঙ্গির দিকে নজর দেওয়াতে এ কাজটা একটু স্লো হয়ে গিয়েছিল। সে কাজটা আইজি (পুলিশ মহাপরিদর্শক) সাহেবের নির্দেশক্রমে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও সন্দেহভাজন কয়েকজন জঙ্গি ধরা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো কেসে কাকে ধরা হয়েছে তা আমরা সুন্দরভাবে জানিয়ে দিয়েছি। বড় ফিগারে ১০ হাজার শোনা যায়। এটা সাত দিনের হিসাব। কাজেই এটা বড় ফিগার নয়।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কোনো অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া হয়নি বলে আইজিপি সাহেব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, সন্দেহভাজন অ্যারেস্ট এগুলো বিভিন্ন খুনের জন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রমাণের ভিত্তিতে ধরা হয়েছে। সাধারণ কোনো ব্যক্তিকে বন্দি করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, হয়রানি ও কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে যাতে আটক করা না হয়।’
গ্রেফতারের বিষয়ে আমাদের ব্যাখ্যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান মন্ত্রী।
বিশেষ অভিযান কবে শেষ হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আইজিপি সাহেব শুরু করেছেন। উনিই এটা শিগগিরই শেষ করবেন। আমাদের যে টেররিস্ট ধরার যে অভিযান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে যে অভিযান তা যখন যেখানে প্রয়োজন হবে আমরা করব।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত পরশু দিন যুক্তরাষ্ট্রে একটা ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেখানে ৫০ জন মারা গেছেন। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি বাংলাদেশও এ ঘটনায় ব্যথিত।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্যটা পড়েছি। তিনি বলেছেন, সেখানে কোনো আইএসের অস্তিত্ব নেই, যদিও সেখানে আইএস আছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। আমারও সেটাই বলছি, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ ধরনের ওয়েবসাইট এ ধরনের মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের দেশে আছে, আত্মপ্রকাশের প্রচেষ্টা নিচ্ছে। আমরা সেটা আবারও তাকে বলেছি তিনিও এ কথাই স্বীকার করেছেন যে বাংলাদেশে আইএসের কোনো সংগঠন নেই।’
‘তার (বার্নিকাট) সঙ্গে আমার আগেও কথা হয়েছে যে আমরা বলেছি টেররিস্ট হচ্ছে একটা গ্লোবাল প্রবলেম। এটাকে ঠেকাতে ইউনাইটেডলি কাজ করতে হবে। আজকেও এটা বলেছি। তিনিও বলেছেন আমরাও একসঙ্গে কাজ করব। কাজের ফিল্ড কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছি।’
মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ফোর্স বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়েছি। এতেই তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পুলিশকে থ্যাঙ্কস দিয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, আপনি যে প্রচেষ্টা নিয়েছেন তাতে আমরা সেফ মনে করছি।’
বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বাংলাদেশে আইএস নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে―একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বার্নিকাট বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক হুমকি, তাই আইএসের অস্তিত্বের বিষয়টিও বৈশ্বিক। যে কেউ কম্পিউটার খুলেই আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, যা তার ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। সন্ত্রাসবাদে উৎসাহিত করতে পারে। তারা আমার জীবন নিয়ে নিতে পারেন। এখানে তারা আছেন কি নেই প্রশ্ন সেটা নয়, প্রশ্ন হচ্ছে সবাই একত্রিতভাবে তাদের প্রতিহত করতে হবে।’