রাজস্ব আদায়ে গতি ফেরাতে হবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৩, ২০২১ , ১২:৪৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
চলতি অর্থবছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। চলমান লকডাউনের কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট আদায়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে অনেকটাই গতি ফিরে পেয়েছিল অর্থনীতি। কয়েক মাস ধরে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলেও গতি আসে। ফলে রাজস্ব আদায়ও বেড়েছিল। দ্বিতীয়বার লকডাউনের পর থেকে আদায়ে গতি নেই। ইতোমধ্যে এনবিআর প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির মুখে পড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়ায় রাজস্ব ঘাটতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ২ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব বোর্ড আদায় করেছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮০৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৯৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যদিও গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের এ সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ১১৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। মহামারিকালে মানুষের আয়-উপার্জন কম। ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে। আমদানিও কম। তাহলে ট্যাক্স আসবে কোত্থেকে? দোকানপাটে বিক্রি নেই, ফলে ভ্যাট আদায়ও কম। আমরা অবশ্য জানি, বছরের শেষ দিকে সাধারণত রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পায়। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে আগামী চার মাসে প্রতি মাসে গড়ে ৪৪ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার-আয়তন, বাণিজ্যসহ অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত আমলে নিলে নির্দিষ্ট রাজস্ব আহরণ কঠিন কিছু নয়। পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে এটা সম্ভব। সরকারের লক্ষ্য ছিল ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে আয় বাড়বে। কিন্তু ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলেও লক্ষ্যমাত্রার উন্নতি নেই। এতে ভ্যাট আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা আদায় কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে এনবিআরের জন্য। এমনি পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করের আওতা বাড়ানোসহ নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা খুবই শ্লথ গতির। বিনিয়োগ বাড়াতে পারলেই কেবল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। রাজস্ব আয় বাড়ানো এর শর্ত। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দরকার করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি। সেখানে রাজস্ব প্রদানে সেবা নিশ্চিত, অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইন-কানুন সময়োপযোগী করা গুরুত্ব পাবে। পরিকল্পনাজনিত সমস্যা তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নানা জটিলতা। আছে দুর্নীতির অভিযোগও। এসব বিষয়ে সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।