রানা প্লাজা ধসে বিচারাধীন মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত হোক
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৫, ২০২২ , ২:৩৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছর পূর্ণ হলো গতকাল। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে ধসে পড়েছিল নয় তলা ভবন রানা প্লাজা। এ ঘটনায় সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়েছিলেন। শিল্প দুর্ঘটনার ইতিহাসে কালো অধ্যায় এ দিনটি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় দুর্ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। কিন্তু এখনো রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের অধিকাংশই কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। এসব শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করছে না। এখনো সম্পাদিত হয়নি বিচারকার্য। এসব তথ্য উঠে এসেছে পত্রপত্রিকার এ সংক্রান্ত রিপোর্টে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও বিপুলসংখ্যক আহত শ্রমিকের বেকার থাকা, যথাযথ চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ না পাওয়া এমনকি বিচারকার্য শেষ না হওয়ার খবর সত্যিই খুব পীড়াদায়ক। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভারে নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ঝরে যায় হাজার শ্রমিকের প্রাণ। ভবনে আটকে পড়া ও হাসপাতালে মারা যাওয়াসহ সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ১৩৮ জনে। ঘটনায় আহত হন কয়েক হাজার। দেশের ইতিহাসে ভবন ধসে একসঙ্গে এত শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি স্মৃতি। একই সঙ্গে এ ঘটনায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ যেভাবে একাত্ম হয়ে নিবেদিতপ্রাণে উদ্ধার কাজ চালিয়েছেনÑ সেই মানবিকতার দৃষ্টান্তও নজিরবিহীন। রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ তখন নেয়া হয় সরকার ও বিজিএমইএর পক্ষ থেকে। কিন্তু আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন যথাযথভাবে করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে এখনো। দুর্ঘটনার ৯ বছর পরও আহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক এখনো কর্মহীন রয়েছেন, অপেক্ষা করছেন পুনর্বাসিত হওয়ার। বেকার এসব শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদের কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না। উল্লেখ্য, রানা প্লাজা ভবন ধস নিছক দুর্ঘটনা ছিল না, এটি ঘটেছিল ভবন কর্তৃপক্ষের অপরিণামদর্শিতার কারণে। ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন না ব্যবহারের সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত মামলা এখনো বিচারাধীন। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় দায়ের করা চারটি মামলার মাত্র একটি নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি তিনটি মামলা এখনো বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। এর বাইরে শ্রম আইনে দায়ের করা ১১টি মামলাও এখনো শ্রম আদালতে বিচারাধীন। দীর্ঘ সময়ে বিচারকার্য শেষ না হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। আমরা প্রত্যাশা করব, বিচারে দায়ীরা সমুচিত শাস্তি পাবে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর এ দেশের পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের অনিরাপদ কর্মপরিবেশের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প। সরকার ও বিজিএমইএর প্রচেষ্টায় কয়েক বছরে সেই সংকট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা গেছে। আমরা চাই না আমাদের কোনো প্রকার অসতর্কতা ও গাফিলতির কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতটি আর কোনো সংকটে পতিত হোক।