আজকের দিন তারিখ ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য রুটি-পাউরুটিতে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক

রুটি-পাউরুটিতে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১ , ২:২২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : রুটি-পাউরুটিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার হচ্ছে বলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সতর্ক করলেও বেকারি মালিকরা বলছেন, যে পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডেট ব্যবহার বন্ধ করতে বলা হয়েছে, সেটা কোন উপাদানে রয়েছে, সেটাই তারা ‘জানেন না’। রুটি, পাউরুটি ও বেকারি খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডেট ব্যবহারের তথ্য পেয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) সম্প্রতি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তাতে অবিলম্বে এই রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, এরপর রুটি, পাউরুটি ও বেকারি খাদ্যে তা পাওয়া গেলে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। বেকারি মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বুধবার বলেন, তারা গণবিজ্ঞপ্তি দেখলেও তাদের ব্যবহৃত কোন উপাদানে পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডেট রয়েছে, সেটাই বুঝতে পারছেন না। “কর্তৃপক্ষের কথায় তো আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা জানিই না কোথায় ব্রোমেট আছে ব্রোমেট ক্ষতিকর আমি মেনে নিলাম। কিন্তু আমাদের তো কেউ একাডেমিক শিক্ষা দেয়নি।” বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ হাজার নানা ধরনের বেকারি রয়েছে। এতে বিভিন্নভাবে কয়েক লাখ লোক সম্পৃক্ত রয়েছে। বেকারিগুলো থেকে ঢাকায় দৈনিক গড়ে ১০ লাখেরও বেশি পাউরুটি সরবরাহ হয় বলে জানান জালাল। তিনি বলেন, “ব্রোমেট-আয়োডেট যদি থাকে, আমরা যদি জানি, তাহলে তো অবশ্যই ব্যবহার করব না। আমাদের বলে দিতে হবে, জানাতে হবে কোথায় এটা আছে? “রুটি তৈরিতে আমরা সাতটা আইটেম ব্যবহার করি; আমাদের বলতে হবে, কোনটার ভেতরে ব্রোমেট আছে, সেটা ব্যবহার করব না।” নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, পাউরুটি ফোলাতে, কৃত্রিম রং ও বিভিন্ন আকৃতি দিতে পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডিনও ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা সংশ্লিষ্টদের কাছে ‘ব্রেড এনহ্যান্সার’ নামে পরিচিত। বেকারি মালিকদের নেতা জালাল আবার সন্দেহ করছেন, বড় কোম্পানিগুলোর ‘স্বার্থ’ রক্ষায় তাদের চাপে ফেলা হচ্ছে। “আমরা বিএসটিআইর অনুমোদনে নির্ধারিত মানদণ্ড মেনে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতি করি। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনই করতে চাই। তবে বড় বড় কোনো কোম্পানির জন্য আমাদের হাজার হাজার ছোট কোম্পানির উপর চাপ বাড়ানো ঠিক হবে না।” হঠাৎ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ অভিযান শুরু করলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়বেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তাই আগে তাদের সচেতন করার উপর জোর দেন তিনি। শিগগির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকে বসবেন বলে তিনি জানান। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বুধবার কে বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে পাউরুটিসহ বেকারি খাদ্যে পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডেট পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে এ জাতীয় খাদ্যে রাসায়নিকটির ব্যবহার নিষিদ্ধ। “তারপরও কেন ব্যবহার হচ্ছে সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও প্রস্তুতকারকরা এখনও অবৈধভাবে এটা ব্যবহার করছে। শিগগির এটা রোধে অভিযান শুরু করা হবে।” গবেষণায় এই চিত্র পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এটার অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে ও আমাদের এখানে যেহেতু নিষিদ্ধ, তাই এ ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা।” মানব শরীরে পটাশিয়াম ব্রোমেটের ক্ষতিকর দিক হচ্ছে- এটা থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ সৃষ্টি করে;  এটা ক্যানসার সৃষ্টি করে এবং জিনগত রোগ ও মিউটেশন ঘটাতে পারে। ডায়রিয়া, বমিভাব ও পেটের পীড়াসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। রুটি, পাউরুটিতে আগে পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার করা হত। প্রতি কেজি পাউরুটিতে ৫০ মিলিগ্রাম ব্যবহার করতে পারত। তবে কয়েক বছর আগে এ উপাদান ব্যবহার না করতে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট-বিএসটিআই। বিএসটিআইর ঊর্ধ্বতন পরীক্ষক (রসায়ন) মনিরুল ইসলাম বলেন, “আগে এর ব্যবহার করা যেত। এখন এসব ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে।” দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পাউরুটিতে পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএসটিআই কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, “মেথড ডেভেলপ করে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখব, আসলেই এসব রাসায়নিক পাওয়া যাচ্ছে কিনা। “গবেষণা রিপোর্ট আর আমাদের পরীক্ষা এক নয়। আমরাও স্বাধীনভাবে পরীক্ষা করে দেখব। আশা করছি, শিগগির একটা রেজাল্ট পাব।”