রেমাল তাণ্ডব
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৮, ২০২৪ , ৪:২৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার পর উপকূল এলাকাসহ সারা দেশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে ২৬ হাজারের বেশি মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে আছে। যা গতকাল পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি। এতে মোবাইল নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় গ্রাহকরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পড়ছে। মোবাইল অপারেটররা জানান, বর্তমানে ৩০ হাজার টাওয়ারে নেই কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ। এর মধ্যে ৩ হাজার টাওয়ার জেনারেটর দিয়ে সচল করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সবশেষ তথ্য বলছে, রাঙ্গামাটি, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, বরিশাল ও বরগুনায় প্রায় ৮০ শতাংশ সাইট অচল রয়েছে। এদিকে ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতারা বলছেন, কাটা পড়া ফাইবার মেরামত এবং বিদ্যুৎসংযোগ পূর্ণস্থাপন হওয়ায়, ২২৫টি পাইপের মধ্যে সচল করা গেছে মাত্র ২৫টি। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে পটুয়াখালীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ২৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এখনো পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার পরিবার। উপকূলের অনেক স্থানে এখনো ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রেমালের তাণ্ডবে গত দুই দিনে জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। কলাপাড়ায় স্রোতের তোড়ে ভেসে গিয়ে শরীফ নামে এক যুবক, বাউফলে ঘরচাপা পড়ে করিম আলী খান নামে এক বৃদ্ধ ও দুমকিতে গাছচাপা পড়ে জয়নাল হাওলাদার নামের অপর এক বৃদ্ধ মারা যান। জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্যমতে, জেলায় ৯১০৫টি পুকুর, ৭৬৫টি মাছের ঘের এবং ১২০টি কাঁকড়া ঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে মৎস্য চাষিদের ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৩৫০০ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা। এছাড়াও পটুয়াখালীতে ৩ কিলোমিটার এবং কলাপাড়া উপজেলায় ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে অনেক স্থানের বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে রয়েছে। গত দুইদিন ধরে বিদ্যুৎহীন রয়েছে অনেক এলাকা। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা আজই মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। আশা করছি ক্ষতিগ্রস্তরা সহায়তা পাবেন। এদিকে জেলার বিভিন্নস্থানে পড়ে থাকা গাছ অপসারণে কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন উপকূলীয় দ্বীপ হাতিয়ায় ভেসে গেছে দুই হাজারেরও বেশি গবাদিপশু। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩ হাজার পরিবার। বিধ্বস্ত হয়েছে পাঁচ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি। হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন জানান, দ্বীপের প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি। শতাধিক পুকুর ও মাছের ঘেরের কয়েক কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। ভেসে গেছে অসংখ্য বনের হরিণ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢালচরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। চর ঘাসিয়ার ১৭ হাজার পরিবার ও চানন্দি ইউনিয়নের চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া হরনী, সুখচর, নলচিরা, চরকিং, চরইশ্বর, তমরুদ্দি, সোনাদিয়া, বুড়িরচর ও জাহাজমারা ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসরত হাজার হাজার পরিবার রয়েছে পানিবন্দি। অনেকের বাড়িঘর-দোকানপাট তীব্র জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিষ চাকমা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে হাতিয়ার বিভিন্ন এলাকার ৩৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আট হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। দুই হাজার ১৩টি গবাদিপশু পানিতে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেছেন, হাতিয়ার অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়েছে, জোয়ারে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সোমবার (২৭ মে) তিনি দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বরাবর এক চিঠিতে হাতিয়া উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে অবহিত করেন। এমপি মোহাম্মদ আলী বলেন, নোয়াখালীর একমাত্র দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে সাত-আট ফুট উচ্চতার জোয়ারে নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় নিঝুম দ্বীপ, ঢালচর ও চর খাসিয়া সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরের মুখে অবস্থিত হাতিয়ার সর্ব দক্ষিণের জনপদ নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রবল জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়েছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কাঁচা ঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তার প্রায় ৬০ ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শতাধিক পুকুরের মাছ ও অসংখ্য গবাদিপশু পানিতে ভেসে গেছে। জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় নগদ টাকা, শুকনা খাবার ও চাল মজুত রাখা আছে। জরুরি সহায়তা হিসেবে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা, ৩১৯ টন চাল, ৬৬৩ প্যাকেট শিশু খাদ্য ও আট হাজার ২২০ কেজি গোখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।